• ওবিসি কারা? ১৪০টি জনগোষ্ঠী চিহ্নিত রাজ্য সরকারের দেওয়া তালিকায়, দু’টিকে নিয়ে চলছে সমীক্ষা, দেখে নিন একঝলকে
    আনন্দবাজার | ১১ জুন ২০২৫
  • অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র তালিকা প্রকাশ করল রাজ্য সরকার। মোট ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হল সেই তালিকায়। আরও দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে সমীক্ষা চলছে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর বুধবারই অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশন ওবিসি তালিকা প্রকাশ্যে আনল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সমীক্ষা করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।

    রাজ্যের দেওয়া তালিকায় ওবিসি জনগোষ্ঠীগুলিকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক, আরও অনগ্রসর বা ওবিসি এ এবং দুই, অনগ্রসর বা ওবিসি বি। প্রথম তালিকায় ৪৯টি এবং দ্বিতীয় তালিকায় ৯১টি জনগোষ্ঠীর নাম রয়েছে। এ ছাড়া কমিশন জানিয়েছে, দেবাঙ্গ এবং ভারভূজা সম্প্রদায়কে নিয়ে পুনরায় সমীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের ওবিসি তালিকায় রাখা হবে কি না, সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

    ২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। রাজ্য ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। সেখানে রাজ্যের মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে কারও সংরক্ষণ পাওয়া উচিত নয়।

    হাই কোর্টের নির্দেশের পর জেলাশাসকদের নেতৃত্বে রাজ্যের সব ক’টি জেলায় সমীক্ষা হয়। সমীক্ষার রিপোর্ট জমা পড়ে অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশনে। রিপোর্টের ভিত্তিতে গত এক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে সল্টলেকের দফতরে শুনানি হয়। তার পর ওবিসি সংরক্ষণের সংশোধিত তালিকার খসড়া মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা দেওয়া হয়। গত ২ জুন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের সংশোধিত (আপডেটেড) তালিকায় সিলমোহর দেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিশনের সদস্য সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই তালিকা প্রকাশের পর কারও যদি কোনও পরামর্শ থাকে, তাঁরাও কমিশনে এসে মতামত জানাতে পারবেন।’’ যদিও এই তালিকার বিরোধিতা করেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, ধর্মের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার এই তালিকা প্রস্তুত করেছে। শাসকদলের এই রাজনীতির ফলে প্রকৃত অনগ্রসরেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই বিতর্কের মাঝেই ওবিসি তালিকা প্রকাশ করা হল।

    এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘এত দ্রুত সমীক্ষা করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক। আরও আগে এটা করা উচিত ছিল। আমরা প্রথম থেকে চেয়েছি, জাতি সমীক্ষা করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের ওবিসি তালিকায় নিয়ে আসতে। তেলঙ্গানা জাতি সমীক্ষা করতে পারলে বাংলায় কেন করা যাচ্ছে না? ওবিসি তালিকায় এনে অনেক পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু মানুষের রুজিরুটির সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)