ছয় দশক পরে ফের ভাগীরথীর পূর্ব পার দিয়ে ছুটবে উত্তরবঙ্গের এক্সপ্রেস। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৪ জুন, শনিবার রাতে জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন থেকে রওনা দিয়ে এনজেপি (নিউ জলপাইগুড়ি), কিসানগঞ্জ, মালদহ হয়ে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট ছুঁয়ে পরদিন শিয়ালদহ পৌঁছবে সাপ্তাহিক ট্রেনটি।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রেল মন্ত্রকের তরফে কাগজে-কলমে অনুমোদন মিলেছিল। কোন স্টেশনে কখন ট্রেন দাঁড়াবে তা জানিয়ে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে ফের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা বলেন, “১৪ জুন থেকে নতুন ট্রেনটি চলাচল শুরু করবে। বাকি খুঁটিনাটি পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে।”
আপাতত যা স্থির হয়েছে, তাতে প্রতি শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ছাড়বে, নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছবে শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে। আবার শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় সেখান থেকে ছেড়ে রবিবার সকালে ৮টা ১০ মিনিটে শিয়ালদহে ফিরবে ট্রেনটি। সম্পূর্ণ বাতানুকূল ১৯ কামরার ট্রেনে ১৬টি বাতানুকূল ‘স্লিপার ক্লাস’ থাকছে। কোচের বিন্যাস করা হয়েছে হামসফর এক্সপ্রেসের মডেলে।
আগামী শনিবার দুপুরে জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। রেলের আধিকারিকরা ছাড়াও জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় থাকবেন। তাঁর অনুরোধে নতুন ট্রেনের ঘোষণা হয়েছে বলে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব চিঠি লিখে সাংসদকে জানিয়েছিলেন। জল্পেশ-জটিলেশ্বর মন্দিরের নামে ট্রেনের নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন জয়ন্ত। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “রেল জানিয়েছে, আপাতত চলাচল শুরু হোক, পরে নামকরণ হবে।”
রেল সূত্রের খবর, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরেও শিয়ালদহ থেকে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের উপর দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের দর্শনা হয়ে দার্জিলিং মেল চলাচল করত। তবে ১৯৬১ সালে ভয়াবহ বন্যার পরে ওই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাস আগে নসিপুরে নতুন রেলসেতু দিয়ে আজিমগঞ্জ-কৃষ্ণনগর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তাতেই কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের নতুন রাস্তাও খুলে গিয়েছে।
সরাসরি উত্তরবঙ্গের রেল পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দারা। এত দিন পদাতিক, দার্জিলিং মেল, তিস্তা-তোর্সা, কামরূপ, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাঞ্চনকন্যা ইত্যাদি উত্তরবঙ্গগামী এক্সপ্রেস ভাগীরথীর পশ্চিম পার দিয়েই চলাচল করত। তার জন্য নদিয়ার কৃষ্ণনগর-রানাঘাট লোককে শিয়ালদহ বা বহরমপুরের লোককে ভাগীরথী পেরিয়ে পশ্চিম পারে যেতে হত। এখন সপ্তাহে অন্তত এক দিন হলেও তাঁদের আর সেই ঝামেলা পোহাতে হবে না।