• শ্রমিক-স্বার্থে বহু গাফিলতি, দাবি দুর্ঘটনায়
    আনন্দবাজার | ১১ জুন ২০২৫
  • হাতে গোনা চার-পাঁচটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। তার মধ্যেও নানা সময়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ইস্পাত অনুসারী এই শিল্পে। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, নিরাপত্তা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ উদাসীন। রয়েছে গাফিলতির অভিযোগও। সোমবার বয়লার ফেটে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে পালিতপুরের একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায়। আহত হন জনা পনেরো। মঙ্গলবার কারখানার মূল ফটকের সামনে ক্ষোভ জানান বেশ কিছু শ্রমিক। আইএনটিটিইউসি ও তৃণমূল নেতৃত্ব কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন। বিকেলে সিটু জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়।

    চুল্লি ফেটে (ইন্ডাকশন ফার্নেস) মৃত ট্রাক চালক, আমির খানের (২৬) বাড়ি বুদবুদে। এ দিন জখমদের মধ্যে তিন জনকে দুর্গাপুর ও দু’জনকে হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে পাঠানো হয়। কারখানা-পরিদর্শক দেবব্রত চক্রবর্তী ও বর্ধমান থানা যৌথ ভাবে ওই কারখানা পরিদর্শন করেন। তাঁরা জানান, এখনও চুল্লির উপরিভাগ তেতে রয়েছে। চুল্লিতে কাজ করা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জখমরা এখনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। সেই কারণে সম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি করা যায়নি। ফরেন্সিক দলও তদন্তে আসবে বলে জানিয়েছে বর্ধমান থানা।

    কারখানা-পরিদর্শক বলেন, “বড় বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারখানার চালা পর্যন্ত উড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন রকমের দ্রব্য নানা জায়গায় ছিটকে পড়েছে। কোনও গাফিলতি থাকলে অবশ্যই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শ্রমিকদের একাংশও এ দিন কারখানার মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আইএনটিটিইউসি ও তৃণমূল নেতাদের সামনে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি তুলে ধরেছেন। তাঁদের অভিযোগ, পালিতপুরের রাস্তায় চার-পাঁচটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় ১২ হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছে। প্রতিটি কারখানারই একই হাল।

    দুর্ঘটনাগ্রস্থ কারখানার অনেক শ্রমিকের অভিযোগ, “বেআইনি ভাবে চুল্লি তৈরি করে চালানো হচ্ছে। নিয়ম হচ্ছে, ট্রাক থেকে ছাঁট লোহা একটা জায়গায় ডাঁই করা হবে। সেখানে কোনও দাহ্য পদার্থ বা ছাঁট লোহায় তরল দাহ্য লেগে আছে কি না তা বাছাই করার পরে চুম্বকের মাধ্যমে চুল্লিতে ফেলা হবে। এ সব নিয়ম মানা হয় না।”

    আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি সন্দীপ বসু বলেন, “বেশ কিছু গাফিলতি, অনেক অনৈতিক কাজকর্মের খবর আমাদের কাছে রয়েছে। সে সব নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিপজ্জনক জায়গায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের জন্য দ্রুত বিমা করার দাবি জানানো হয়েছে। প্রত্যেক শ্রমিকের পরিচয়পত্র দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।” বর্ধমান ১ ব্লক সভাপতি কাকলি তা গুপ্ত বলেন, “বিস্ফোরণের পরে কারও হাত ঝুলছে, কারও চামড়া ঝুলে গিয়েছে, এমন শ্রমিকদের হাত ধরে টানতে টানতে কারখানার বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। এতটাই অমানবিক! প্রতিটি কারখানায় অ্যাম্বুল্যান্স ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।” সিটুর জেলা সম্পাদক তাপস চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “চূড়ান্ত অব্যবস্থা রয়েছে কারখানাগুলিতে। শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ ভাবছেন না। কম দক্ষ শ্রমিক নিয়েই কাজ চলছে।’’ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আয়রন অ্যান্ড স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’-র সদস্য মনোজ পাশারি বলেন, “কেন দুর্ঘটনা সেটা এখনও জানা যায়নি। দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা আছে। আমরা যেতে পারিনি। তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই কী ঘটনা জানা যাবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)