নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: জ্যৈষ্ঠের প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে মালদহে পালিত হল জগন্নাথের স্নানযাত্রা। ইসকনে এদিন তিনশো লিটার গরুর দুধ, ৫০ কেজি দই ও মধু দিয়ে স্নান করিয়ে অভিষেক হল মালদহ ইসকনের জগন্নাথ দেবের।
মালদহ ইসকনের সভাপতি শ্রী অমৃতকারণ দাস প্রভু এদিন স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, এই দিনটি আসলে জগতের নাথ জগন্নাথ দেবের জন্মদিন। সেই উপলক্ষে স্নানযাত্রার মধ্য দিয়ে তাঁর অভিষেক করা হচ্ছে। এখানে তিনশো লিটার গরুর দুধ, ৫০ কেজি দই ও সমপরিমাণ মধু, তিল, ঘি, চিনি, ফুল, ফুলের পাপড়ি, গঙ্গাজল সহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক সামগ্রী দিয়ে জগন্নাথ দেবকে স্নান করানো হয়।
হিন্দু শাস্ত্র ও হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম পূণিমা তিথিকেই জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব দিবস বা জন্মদিন হিসেবে ধরা হয়। এই দিনটিতে স্নানযাত্রা উপলক্ষে সুভদ্রা, বলরামের বিগ্রহ মন্দির থেকে বের করে আনা হয়। হিন্দু রীতি মেনে এই তিন বিগ্রহ স্নানবেদিতে তোলার পর সেখানেই দুধ, ঘি, মধু ও আরও অন্যান্য মাঙ্গলিক সামগ্রী দ্বারা জগন্নাথের স্নানযাত্রা শুরু হয়। মালদহ ইসকনে এদিন সকাল থেকেই স্নানযাত্রা শুরু হয়। প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় সেখানে। অনেকে এই স্নানযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
কথিত আছে এবং বিশ্বাস অনুসারে এই স্নানযাত্রার পর নাকি জগন্নাথ দেব অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সময় তাঁকে রাজ বৈদ্যের চিকিৎসাধীনে গোপনে একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। জগন্নাথ দেবের এই অসুস্থতার পর্যায়টি ‘অনসর’ নামে পরিচিত। এই সময় ভক্তেরা দেবতার দর্শন পান না। কোনও কোনও ধামে এই সময়ে জগন্নাথ দেবের বিগ্রহের পরিবর্তে ছবি বা পট রাখা হয় ভক্তদের দর্শনের জন্য।
অমৃতকারণ দাস প্রভু আরও জানান, প্রত্যেক মানুষ জগন্নাথ দেবের অভিষেক বা স্নানযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। যাঁরা প্রভুর এই স্নানযাত্রা দর্শন করবেন, তারা কোটি কোটি বছরের পাপ থেকে মুক্তি পাবেন। একই সঙ্গে জীবনের নানা দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে তাঁরা ভগবৎ ধামে যেতে পারবেন।
ইসকনের পাশাপাশি ইংলিশবাজারের রামকেলিতেও এদিন ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথের স্নানযাত্রা। এছাড়াও মালদহ জেলার বিভিন্ন রাধাকৃষ্ণ মন্দির, গৌড়ীয় মঠে স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় এদিন। পুরাতন মালদহে স্নানযাত্রা উপলক্ষে এদিন নগর কীর্তনের শোভাযাত্রা বের হয়। স্নান করানো হচ্ছে বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথদেবকে। মালদহে মলিন দাসের তোলা ছবি।