নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: বুধবার উৎসবের পরিবেশে কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর মদনমোহনের দ্বাদশ যাত্রার অন্যতম স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হল। এই উপলক্ষ্যে সকালে মদনমোহনকে ১০৮ কলস জল দিয়ে স্নান করানো হয়। মন্দিরে হয় বিশেষ পুজো। আগামী ২৭ জুন রথযাত্রা। এবারই নতুন রথে চেপে জেলাবাসীর প্রাণের ঠাকুর মদনমোহন মাসিরবাড়ি গুঞ্জবাড়িতে যাবেন। তারও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই।
স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে মদনমোহনকে এদিন বারান্দায় নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাঁকে গঙ্গা জল, ডাবের জল, সমুদ্রের জল সহ বিভিন্ন জল দিয়ে স্নান করানো হয়। এরপর মদনমোহন আবার সিংহাসনে অধিষ্ঠান করেন।
জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথিতে মদনমোহনের এই স্নানযাত্রার পরেই রথের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এবার মদনমোহন তাঁর একশো বছরের পুরনো রথের বদলে নতুন রথে চেপে মাসিরবাড়ি যাবেন। সেই রথের শেষমুহূর্তের নির্মাণ কাজ চলছে গুঞ্জবাড়িতে। আর রথের চাকা বানানো হচ্ছে জেলার তুফানগঞ্জে। সেই কাজও শেষের পথে।
গতবছর পর্যন্ত যে রথে চেপে মদনমোহন মাসিরবাড়ি যেতেন সেই পুরনো রথটি প্রতিবছরই সংস্কার করা হতো। কিন্তু এবার প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নতুন রথ নির্মাণ করার। সেইমতো জলদাপাড়ার জঙ্গল থেকে কাঠ নিয়ে এসে রথ বানানোর কাজ শুরু করা হয়। দক্ষ শ্রমিক এনে আগের রথের মতোই হুবহু রথ বানানোর কাজ শেষের পথে। তারআগে রাজআমলের প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হল এদিন। মদনমোহনের স্নানযাত্রায় শামিল হতে সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্ত সমাগম হয়। সন্ধ্যাতেও ছিল মন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড়।
মদনমোহন মন্দিরের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, এদিন ১০৮ কলস জল দিয়ে মদনমোহনকে স্নান করানো হয়েছে। বিশেষ পুজোও হয়েছে মন্দিরে। এবার মদনমোহন নতুন রথে চেপে গুঞ্জবাড়ি যাবেন। তুফানগঞ্জে রথের চাকার উপরে এখন লোহার বেড়ি পড়ানোর কাজ চলছে। ২০ জুনের মধ্যে রথের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
কোচবিহারের মদনমোহনের রথযাত্রায় প্রতিবছরই হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। এবারও তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এবার যেহেতু কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর নয়া রথে চেপে মাসিরবাড়ি যাবেন, তাই তার আলাদা মাত্রা রয়েছে। তারআগে এদিন স্নানযাত্রা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রথ উৎসবের একটা আবহ তৈরি হয়েছে কোচবিহারে। রথযাত্রাকে ঘিরে প্রস্তুতিও চলছে পূর্ণ উদ্যোগে।
কোচবিহার মহারাজাদের প্রতিষ্ঠিত মদনমোহন মন্দিরে রথযাত্রা, রাস পূর্ণিমায় রাস উৎসবের মতো অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে রাসমেলা। আর মদনমোহনের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর গুঞ্জবাড়িতে সাতদিন ধরে চলে মেলা। মন্দির থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট পথে মাসিরবাড়ি যাওয়া এবং উল্টো রথে আবার নির্দিষ্ট পথে মন্দিরে ফিরে আসেন মদনমোহন। আর এরমধ্যে দিয়েই যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে প্রাণের ঠাকুর মদনমোহনের রথযাত্রা। একসময় কোচবিহারের মহারাজারা যে রথযাত্রা শুরু করেছিলেন তা এত বছর পরেও নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে চলছে। স্নান করানো হচ্ছে মদনমোহনকে। ছবিটি চন্দন দাসের তোলা।