• ঝাড়খণ্ডের সারান্ডার জঙ্গল থেকে ঝাড়গ্রামে আশ্রয় মাওবাদীদের?
    বর্তমান | ১২ জুন ২০২৫
  • প্রদীপ্ত দত্ত, ঝাড়গ্ৰাম: এশিয়ার বৃহত্তম শাল জঙ্গল সারান্ডা এখন ঝাড়গ্রাম পুলিসের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম সিংভূম এবং সরাইকেলা জেলাজুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। যা মাওবাদীদের বিচরণ ক্ষেত্র। গত সপ্তাহে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার কমলাপুর থানার পুলিস বেলপাহাড়ীর জামিরডিহা গ্রামের বাসিন্দা ফেরার মাওবাদী নেত্রী জবা, বিদরি গ্রামের মঙ্গল সিং সর্দার ও গোপীবল্লভপুর থানার পাথরনাশা গ্রামের মালতির বাড়িতে এসে আদালতের নোটিস সাঁটিয়ে গিয়েছে। জেলার রাজনৈতিক মহলে যা নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক মহলই নয়, চিন্তিত জেলার পুলিস মহলও। কারণ ঝাড়গ্রাম জেলা ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ও জঙ্গল অধ্যুষিত। জঙ্গল দিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে ঝাড়গ্রামে এসে গা ঢাকা দেওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই রয়েছে। বিশেষত এই জেলা যখন এক সময়ে মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল। যদিও কেন্দ্রের রিপোর্টে এই জেলা বর্তমানে মাওবাদী মুক্ত। তবে সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে দুই শীর্ষ মাওবাদী নেতার মৃত্যু এবং পরবর্তীতে মাওবাদীদের প্রেশার মাইন বিস্ফোরণে এক পুলিস কর্তার মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এই আবহে সারান্ডার জঙ্গল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে মাওবাদীরা ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে ঢুকে পড়তে পারে বলে সূত্রের খবর। যা জেলার পুলিস কর্তাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলার জঙ্গল লাগোয়া সীমানা এলাকায় চলছে লাগাতার নজরদারি। ঝাড়গ্রামের এসপি অরিজিৎ সিনহা বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের খবর অনুযায়ী ঝাড়গ্রামে মাওবাদী গতিবিধির কোনও খবর নেই। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার সাথে এই জেলার সীমানা রয়েছে। ওই জেলাও মাওবাদী মুক্ত হিসেবে ঘোষিত। পশ্চিম সিংভূম জেলার সঙ্গে এই জেলা সীমানা নেই। তবে ওই জেলার সারান্ডার জঙ্গলে মাওবাদীদের গতিবিধি থাকতে পারে। নজরদারি আগের মতোই চলছে। ঝাড়গ্রাম সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জঙ্গল রয়েছে। গভীর জঙ্গল পথ দিয়ে অনায়াসে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়া যায়। 

    নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে পিপলস ওয়ার গ্রুপ (পিডব্লিউজি) ও মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টারের (এমসিসি) সদস্যরা ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় পৃথকভাবে কাজ শুরু করে। পরে দু’টি দল মিশে গিয়ে তৈরি হয় সিপিআই (মাওবাদী)। এতে জেলাজুড়ে সন্ত্রাসী রাজনীতির তীব্রতা অনেকটাই বেড়ে যায়। অনুন্নয়ন, দারিদ্রকে হাতিয়ার করে সংগঠনের জাল ছড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর ভাদুতলায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের কনভয়ে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণ হয়। ঝাড়গ্রামে ২০১০ সালের ২৮ মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস  লাইনচ্যুত হলে ১৪৮ জন যাত্রী নিহত হন। এর পিছনেও মাওবাদী নাশকতা ছিল বলে পুলিসি মত। জঙ্গলমহলজুড়ে শতাধিক নিরীহ মানুষ খুনের রাজনীতির শিকার হন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলাজুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হলে জেলায় শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসে। কিন্তু ফের ছত্তিশগড়ের মাওবাদী দমন অভিযানকে কেন্দ্র করে জেলার রাজনৈতিক মহল সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। ঝাড়গ্রামে ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তারপরেও পুরনো ঘাঁটিতে মাওবাদীদের আশ্রয় নেওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, মাওবাদীদের হাতে আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। মাওবাদীদের সন্ত্রাসের রাজনীতি আমাদের পক্ষেও সমস্যাজনক। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি প্রসূণ ষড়ঙ্গি বলেন, বাম নেতাদের স্বৈরাচার মাওবাদীদের বাড়তে সাহায্য করেছিল। উন্নয়নের হাত ধরে জেলায় শান্তি ফিরেছে। সন্ত্রাসের রাজনীতির ঠাঁই নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)