• হাই মাদ্রাসায় ১৫ জনের নিয়োগে প্রশ্ন, তদন্তে সচিব ও জেলাশাসক
    বর্তমান | ১২ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মাড়গ্রাম হাই মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে মাদ্রাসা বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছিল। বুধবার দুপুরে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আসেন রাজ্য সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষাদপ্তরের সচিব পিবি সেলিম, জেলাশাসক বিধান রায়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রামপুরহাটের এসডিও, স্থানীয় বিডিও, পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা। তাঁরা দেখেন, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মাদ্রাসায় ১১জন শিক্ষক ও চারজন অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। যা অবৈধ। তাঁদের স্কুলে না আসার জন্য বলেন জেলাশাসক। এরপরই পুলিস ওই ১৫জনকে স্কুল থেকে বের করে দেয়। ওই শিক্ষকদের ভুয়ো বলার পাশাপাশি স্কুলে ঢুকতে না দিতে গ্রামবাসীদের বলেন জেলাশাসক।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮সালে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়। তারপরও ২০১৭সালে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয় মাড়গ্রাম হাই মাদ্রাসা পরিচালন কমিটি। লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের পর ২০১৯ সালে ওই ১৫জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। চাকরিতে যোগ দিলেও তাঁরা বেতন না পাওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। অভিযোগ, এরমধ্যে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন তাঁরা। পরবর্তীতে আদালত প্রাক্তন এক বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেয়। ওই কমিটি খতিয়ে দেখে নিয়োগ বাতিল করে। শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের পাল্টা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ভেরিফিকেশন করে সন্তুষ্ট হলে বেতন দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বেতন পেতে তাঁরা ডিআই অফিসে ফাইলপত্র জমা করেন। যার বিরোধিতা করে তৃণমূল মাদ্রাসা টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের জেলা সভাপতি ফজলে মৌলা খান বলেন, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন থাকা সত্ত্বেও স্কুল পরিচালন কমিটি অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগ করেছে। সংখ্যালঘু দপ্তরে অভিযোগও করি। অভিযোগ খতিয়ে দেখে রাজ্যের বিভিন্ন মাদ্রাসার ৪৯৮জনকে ভুয়ো ঘোষণা করা হয়। সেই তালিকায় মাড়গ্রাম হাই মাদ্রাসার ১৫জন রয়েছেন। 

    জানা গিয়েছে, গ্রীষ্মের ছুটির পর মাদ্রাসা খুলতেই ওই শিক্ষকরা যোগ দেন। অন্যান্য শিক্ষকরা তাঁদের ক্লাস নিতে বাধা দিলে অশান্তি হয়। এদিন রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা মাদ্রাসায় আসেন। গোপালচন্দ্র দাস নামে এক শিক্ষককে টিআইসির চার্জ দিয়ে এদিন অনুপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক গোলাম মহম্মদ। গোপালবাবু বলেন, আধিকারিকরা রেজ্যু঩লিউশন ও নানা কাগজপত্র দেখতে চাইলেও দেখাতে পারিনি। আলমারিতে তালা মারা ছিল। কেবল শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখাতে পেরেছি। সেগুলি সিজ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক হয়তো আগাম জানতে পেরেই ইচ্ছাকৃতভাবে আসেননি।

    অনিয়মের তালিকায় থাকা শিক্ষক রিয়াজ কাজল বলেন, মাদ্রাসার বিজ্ঞাপন দেখে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলেও ধরেননি। মেসেজের কোনও উত্তর দেননি। এআই গোলাম কিবরিয়া বলেন, ওই শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, শুধু নিয়োগ নয়, মিড ডে মিলেও অনিয়ম হচ্ছে। ছ’বছর ধরে কোনও অডিট হয়নি। জেলাশাসক বলেন, ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)