নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে হয়নি পুর বোর্ডের বৈঠক। যার ফলে গ্রহণ করা যায়নি নতুন প্রকল্প। পুরনো কাজ যা চলছিল, সেগুলোও অসমাপ্ত হয়ে রয়েছে। বাজেট অধিবেশনও অথৈ জলে। সৌজন্যে কৃষ্ণনগর পুরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলারদের অন্তর্কলহ। শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের মন কষাকষি ও বিবাদের কারণে শহরবাসীর বঞ্চিত পুর পরিষেবা থেকে। পুরসভার এই অচলাবস্থা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে শহরবাসীর। বোর্ড মিটিং না হওয়ায় বকেয়া রয়েছে ঠিকাদারদের কয়েক লক্ষ টাকার পেমেন্ট। রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার, আলো লাগানোর মতো কাজ হচ্ছে না। শহরবাসীর দাবি, সমস্যার সমাধান নিয়ে কৃষ্ণনগর পুরসভার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী একে অপরের দিকে দায় ঠেলছে।
কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, আমরা চাইছি এই অচলাবস্থা কাটুক। পুরসভার কাজ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছু কাউন্সিলার কী কারণে এই অবস্থাকে জিইয়ে রাখতে চাইছে, বুঝতে পারছি না। শহরবাসী এর ফলে ভুগছেন।
কৃষ্ণনগর পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। অতীতে তা দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে। এই বিবাদ উচ্চ আদালতেও গড়িয়েছে। তৃণমূলের কাউন্সিলারদের একাংশের অভিযোগ, চেয়ারপার্সন পুরসভার কাজ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনিয়ম করছেন। যদিও সেই অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে এসেছেন চেয়ারপার্সন রীতা দাস। গত মার্চ মাসে বাজেট অধিবেশন হয়েছিল। কিন্তু অবৈধভাবে বাজেট পাশের অভিযোগ তোলেন চেয়ারপার্সন বিরোধী কাউন্সিলাররা। শেষমেশ, গত মে মাসে পুরসভা নতুন করে বাজেট অধিবেশনের আবেদন করে ডিএলবি’র কাছে। তারপর পুর বোর্ডের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হতো, কবে তাঁরা পুনরায় বাজেট অধিবেশন করতে চান। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। যার ফলে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই শহরের উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি থমকে গিয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের চেয়ারপার্সন বিরোধী তৃণমূলের কাউন্সিলাররা উচ্চ আদালতে মামলা ঠুকেছেন। পুরসভার কাজ নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, বাজেট অধিবেশন না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়নমূলক কাজের বিল পেমেন্ট করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধী কাউন্সিলাররা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার রাস্তা, লাইট, ড্রেন সহ ৩০টি প্রকল্পের ৬০-৭০ লক্ষ টাকার বিল আটকে রয়েছে। শেষবারে গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ সভা হয়েছিল। কিন্তু সাড়ে চার মাস আগে হওয়া সেই সাধারণ সভায় গৃহীত প্রকল্পের কোনওটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের সাধারণ সভায় গৃহীত কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় ছ’ মাস ধরে শহরে নতুন কোনও উন্নয়নমুলক কাজ গৃহীত হয়নি। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, বোর্ড অব কাউন্সিলের মিটিং না হওয়া পর্যন্ত নতুন পরিকল্পনার দিকেও এগনো যাচ্ছে না। চেয়ারপার্সনের বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূলের কাউন্সিলার মিলন ঘোষ বলেন, চেয়ারপার্সনের স্বেচ্ছাচারিতা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। পুরসভার নানা কাজে অনিয়ম করা হয়েছে। বোর্ড মিটিং কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই কাজ করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। শহরের মানুষের দুর্দশার দায় চেয়ারপার্সনের। কৃষ্ণনগর পুরসভার বিজেপির কাউন্সিলার বর্ণালী গুইন দত্ত বলেন, পুরসভার এই অচলাবস্থার জন্য শহরবাসী ক্ষুব্ধ। তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জন্য মানুষ পরিষেবা ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।