সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: বুধবার মায়াপুর ইসকনের শাখা কেন্দ্র রাজাপুর মন্দিরে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উৎসব পালিত হল। স্থানীয় ও বিদেশি ভক্তরা সকাল থেকেই লাইন দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীর মাথায় গঙ্গার জল ও ডাবের জল ঢালতে থাকেন। জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথি উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবছরও মহাসমারহে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উৎসব হচ্ছে। পাণ্ডু বিজয়ের মাধ্যমে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীর বিগ্রহ স্নান বেদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ষোড়শ প্রচারে ঘি, দুধ, দই, মধু, পাঁচ রকমের ফলের রস, ডাবের জল সুগন্ধি দিয়ে স্নান করানো হয়। এদিন জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার পাশাপাশি নবদ্বীপের অধিষ্ঠাত্রীদেবী মা পোড়ামা পূজার্চনা মেতে উঠেছেন বাসিন্দারা।
জগন্নাথদেবকে প্রতিদিনই অন্ন, ডাল, বিভিন্ন পদের ব্যঞ্জন ভোগ দেওয়া হয়। কিন্তু, এই বিশেষ দিনে শাক, শুক্তো, পাঁচ রকমের ভাজা, পনির তরকারির মতো ৫৬ রকমের ভোগ নিবেদন করা হয়। এই বিশেষ দিনে জগন্নাথ, বলরামকে গজবেশ আর সুভদ্রাদেবীকে পদ্মবেশ পরানো হয়। স্নানযাত্রার পরের দিন থেকে আগামী ১৫ দিন মন্দির বন্ধ থাকে। কথিত আছে, স্নানের পর প্রভুর জ্বর চলে আসে। এটা তাঁরই লীলা। এরপর রথের আগের দিন পুনরায় ভক্তদের তিনি দর্শন দেন।
ইসকনের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণবিজয় দাস বলেন, ইসকনের শাখা কেন্দ্র রাজাপুর জগন্নাথ মন্দিরে স্নানযাত্রা উৎসব পালন করা হচ্ছে। এদিন এখানে প্রায় ২০ হাজার ভক্তের জন্য ভোগ প্রসাদের আয়োজন করা হয়। এদিন নবদ্বীপের বড় আখড়া জগন্নাথ মন্দির, প্রাচীন মায়াপুর জগন্নাথ মন্দির বালক সাধুর আশ্রম, রাধারমন বাগ সমাজ বাড়ি আশ্রমেও জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। স্নানযাত্রার এই পুণ্য তিথিতে নবদ্বীপের অধিষ্ঠাত্রীদেবী পোড়ামার বিশেষ পুজো পাঠ, হোম যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন ভোর সাড়ে ৪টের সময় ১১টি ঢাক, বাদ্যযন্ত্র সহকারে গঙ্গা থেকে ১০৮ কলসি জল নিয়ে আসা হয়। সেই জল দিয়ে পোড়ামাকে স্নান করানো হয়। বছরের এই একটা দিন দুপুরে দেবীর উদ্দেশ্যে পুষ্পান্ন, পাঁচ ভাজা, বিভিন্ন রকমের তরকারি, পরমান্ন, দই, মিষ্টি নিবেদন করা হয়। প্রতিবছর এই দিনে পোড়ামার তামার দেবীঘটের গঙ্গার জল পরিবর্তন করা হয়। প্রধান পুরোহিত কৌশিক ভট্টাচার্য্য বলেন, সারা বছর ফল, মিষ্টি, নৈবেদ্য ভোগ নিবেদন করা হয়। কেবলমাত্র স্নানযাত্রার পুণ্য তিথিতে খিচুড়ি, পুষ্পান্ন ভোগ নিবেদন করা হয়।