• মদ-কার্বলিক অ্যাসিড কিনে দিয়েছিল মিতার প্রেমিকই
    বর্তমান | ১২ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়ার আমুল গ্রামে পরকীয়ার জেরে স্বামীকে মদের সঙ্গে অ্যাসিড মিশিয়ে খুনের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বধূর প্রেমিকই। সে বধূকে কার্বলিক অ্যাসিড কিনে দিয়েছিল। কাটোয়ার একটি হোটেলে বসেই এই খুনের পরিকল্পনা করে তারা। বধূর পর এবার সেই প্রেমিককে গ্রেপ্তার করল পুলিস। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম অভিজিৎ বাগদি। তার বাড়ি বীরভূমের নানুর থানার চণ্ডীদাস পাড়ায়। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় দিনমজুর নানুরের বাসিন্দা অভিজিতের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিল মিতা। পাঁচমাস আগে একবার অভিজিতের সঙ্গে সে পালিয়ে গিয়েছিল। তার সঙ্গেই নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু, স্বামী মহাদেব দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে মিতাকে পুলিস উদ্ধার করে। তবে তারপরেও মিতা-অভিজিতের মেলামেশা বন্ধ হয়নি। প্রায়ই তারা গোপনে দেখা করত। অভিজিৎ মিতার শ্বশুরবাড়িও একাধিকবার এসেছিল। তখন স্বামীর কাছে মিতা তার প্রেমিককে বাপেরবাড়ির লোক বলে পরিচয় দিয়েছিল।

    পুলিস জানতে পেরেছে, জামাইষষ্ঠীর দিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে মিতা তার বাপেরবাড়ি মঙ্গলকোটের বাজার বনকাপাশিতে গিয়েছিল। ওইদিন ছেলেমেয়েকে রেখে সে তার প্রেমিকের সঙ্গে কাটোয়ার জাজিগ্রামে দেখা করে। তারপরে দু’জনে কাটোয়া শহরের মিলপাড়া এলাকার একটি হোটেলে ওঠে। সেখানে তারা দীর্ঘসময় কাটায়। ওই হোটেলে বসেই মহাদেবকে খুনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়। প্রেমিক অভিজিৎ সারাজীবনের মতো মিতাকে পেতে চেয়েছিল। তাই সে মিতাকেই স্বামীকে খুন করতে বলে। কার্বলিক অ্যাসিড সে কিনে দেয়। এরপর মিতা সেই রাতে তার স্বামী মহাদেবের সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করে। তারপর সে তার স্বামীকে মদ খেতে দেয়। তারপরেই খুন করে। ভোরে মিতা তার প্রেমিককে ফোনে জানায়, ‘কাজ হাসিল’। 

    মঙ্গলবার বিকেলে মিতাকে নিয়ে কাটোয়ার আমুল গ্রামে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়। সেখানে মিতা কীভাবে তার স্বামীকে খুন করে তা দেখায়। সেখান থেকে একটি বিয়ারের বোতল আর একটি মদের বোতল উদ্ধার করে পুলিস। পাশাপাশি কার্বলিক অ্যাসিডের বোতলটিও উদ্ধার করা হয়। তবে মিতা একাই তার স্বামীকে খুন করেছিল নাকি কেউ সাহায্যে করেছিল, তা জানতে প্রেমিককে মিতার সামনে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিস।

    প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন রাতে কাটোয়ার আমুল গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব দাসকে খুন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্ত্রী মিতা দাসের বিরুদ্ধে। মদের সঙ্গে প্রথমে কার্বলিক অ্যাসিড মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ানো হয়েছিল। তারপর তাঁর মাথার পিছনে বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে বালিশ চাপা দেওয়া হয়েছিল। পরকীয়ায় বাধা দেওয়াতেই রাগ ছিল স্ত্রীর। এমনকী, মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক প্রমাণ করতে মৃতদেহের সঙ্গে সে রাত কাটায়। পরেরদিন কাকভোরে স্ট্রোকে মৃত্যু হয়ে বলে মিতা তার শাশুড়িকে ডেকে আনে। ঘটনার পর এলাকার বাসিন্দারা ছুটে আসেন। কাটোয়া থানার পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে পুলিস মিতাকে গ্রেপ্তার করে।
  • Link to this news (বর্তমান)