নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: জেলার প্রত্যন্ত এলাকার অর্থনীতি মজবুত করাই প্রধান লক্ষ্য। তাই জেলায় ১ লক্ষ মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ করার উদ্যোগ নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৬৫ হাজার লাখপতি দিদি তৈরি হয়েছে। এরফলে গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতি বদলাচ্ছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, লাখপতি দিদিরাই এই জেলার আর্থ সামাজিক পরিবর্তনের মডেল হয়ে উঠছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল, নারীদের স্বনির্ভর ও আয়ক্ষম করে গড়ে তোলা। যাতে তাঁরা বছরে ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা আয় করতে সক্ষম হন। প্রতি ১২০ জন লাখপতি দিদির জন্য একজন কমিউনিটি রিসোর্স পার্সন নিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরাসরি লাখপতি দিদিদের সঙ্গে যুক্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের ওরিয়েন্টেশন ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট দিচ্ছেন। অপরিদকে, প্রাণিমিত্রা ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেও দিদিদের পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালন, দুগ্ধ উৎপাদন, মৌমাছি পালন সহ একাধিক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক মিশন ডিরেক্টর ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (কৃষি) গোবিন্দ হালদার বলেন, জেলায় বিপুল সংখ্যক মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাঁদের আর্থিক কাঠামো আরও মজবুত করতে ‘লাখপতি দিদি’ তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের আয় বাড়লে গ্রামীণ এলাকায় অর্থনীতি অনেকটাই বদলাবে। মহিলাদের যে কোনও সমস্যায় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জেলার মেয়েদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এসেও মহিলাদের স্বনির্ভরতার বার্তা দিয়েছেন। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় হস্তশিল্পের প্রসারের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান। সেই কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের উদ্যোগে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বেশকিছু বছর ধরেই শুরু হয়েছে মহিলাদের ট্রেনিং দেওয়ার কাজ। এরফলে স্বনির্ভর হতে শুরু করেছে জঙ্গলমহলের মেয়েরা। বর্তমানে মেয়েদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গৃহবধূরাও বিভিন্ন হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এরফলে জেলায় কর্মসংস্থান বাড়ছে। জানা গিয়েছে, শুধু মেদিনীপুর জেলায় ৭০ হাজারের বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। গত আর্থিক বছরে তাঁদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই জেলায় ৬৫ হাজার লাখপতি দিদি তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা এক লক্ষ। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে যে সুসংগঠিত পরিকল্পনা ও মনিটরিংয়ের প্রয়োজন, তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলার দাসপুর-১, দাসপুর-২, চন্দ্রকোণা-১, ডেবরা, কেশপুর ব্লক ছাড়াও বেশকিছু ব্লকে সবচেয়ে বেশি লাখপতি দিদি রয়েছে।
এদিন কথা হচ্ছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত শিল্পী দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনেক উপকার হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে ঋণের টাকাও পেয়েছি। তবে জেলায় মার্কেটিং ব্যবস্থা আরও উন্নতমানের হলে লাখপতি দিদির সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।