নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক ও সংবাদদাতা, কাঁথি: ভক্তদের বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বুধবার দীঘা জগন্নাথ মন্দিরে পবিত্র স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হল। সকাল থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণ সেজে ওঠে। উৎসাহী ভক্তদের ভিড় ছিল দেখার মতো। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ৯টা বাজতেই মন্দিরের গর্ভগৃহে কাঁসর, ঘণ্টা বেজে ওঠে। বৃষ্টির মধ্যেই শুরু হয় ‘পাহাণ্ডি বিজয়’। খোল-করতালের শব্দে ভরে ওঠে মন্দির চত্বর। পাহাণ্ডি বিজয়ের মাধ্যমে মন্দিরের ডানদিকে তৈরি হওয়া স্নানমণ্ডপে সুদর্শন চক্র নিয়ে আসা হয়। এরপর আসেন বলরাম, সুভদ্রা এবং প্রভু জগন্নাথদেব। স্নানমণ্ডপে আনা হয় মদনমোহনের বিগ্রহও।
জগন্নাথদেবের পবিত্র স্নানযাত্রার জন্য ১০৮টি তীর্থক্ষেত্র থেকে কলসভর্তি জল নিয়ে আসা হয়। সেই জলে মেশানো হয় তুলসীপাতা, কাঁচা দুধ, আতর, চন্দন, কর্পূর সহ বিভিন্ন সামগ্রী। স্নানের আগে সিল্কের চাদরে মুড়ে ফেলা হয় তিনটি বিগ্রহ। তুলসী পাতা দিয়ে স্নানযাত্রার আগে সম্পন্ন হয় তুলসী দান। সঙ্গে চলে ভক্তিভরে মন্ত্রোচ্চারণ। স্নানযাত্রা, নামগান সহ যাবতীয় আচার পালনের জন্য ইস্কন থেকে এসেছেন ১০০জন সাধু। একে একে ঢালা হয় পবিত্র তীর্থক্ষেত্রের ১০৮কলস জল, ১০০লিটার কাঁচা দুধ সহ নানা সামগ্রী। এরপর মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে নিয়ে গিয়ে জগন্নাথদেব ও বলরামকে গজবেশ এবং সুভদ্রাকে পদ্মবেশে সজ্জিত করা হয়।
এদিন সকালেই জগন্নাথদেবের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে পাকা আম, কাঁঠাল ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন এসে পৌঁছেছিল। স্নানযাত্রার পর ৫৬ভোগ(চাঁপান ভোগ) নিবেদন করা হয়। সেই ভোগের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে আসা আম, কাঁঠালও ছিল। সকাল থেকে দূরদূরান্তের ভক্তরা স্নানযাত্রা দর্শনে জগন্নাথদেবের নব আলয়ে হাজির হয়েছিলেন। আগামী ২৭জুন দীঘা জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে ইস্কনের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা থাকবেন। এদিন স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্দির ট্রাস্ট কমিটির অন্যতম সদস্য রাধারমণ দাস। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী। বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য জগন্নাথ প্রভু গজবেশে দর্শন দিয়েছেন।
প্রথা অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পর জ্বর আসে তাঁর। ১৫দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকবেন। আয়ুর্বেদিক পাঁচনে সুস্থ হয়ে জগন্নাথ ফের ২৬তারিখ ভক্তদের সামনে আসবেন। রাধারমণ দাস বলেন, ১২-২৫জুন পর্যন্ত জগন্নাথদেব শয়নে থাকবেন। তবে, ভক্তদের মন্দিরে প্রবেশে কোনওরকম বাধা থাকছে না। ২৬তারিখ থেকে যথারীতি জগন্নাথদেবের দর্শন পাবেন ভক্তরা। ২৭তারিখ মাসির বাড়ির উদ্দেশে রথে যাত্রা করবেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, বুধবার স্নানযাত্রা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। স্নানযাত্রার পর আসন্ন রথযাত্রা নিয়ে জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার রথযাত্রায় দীঘায় উপস্থিত থাকবেন। ফলে জগন্নাথ মন্দিরে বিপুল সংখ্যক ভক্ত সমাগম হবে বলে আশা করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে হোটেল ও বিভিন্ন গেস্টহাউসে বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। বঙ্গোপসাগরের তীরে দীঘায় প্রভুর নব আলয়ে এবার রথযাত্রা এককথায় ঐতিহাসিক হতে চলেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।