• বনদপ্তরের জমিতে খাদান নালিশেও নীরব কর্তারা
    বর্তমান | ১২ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: বনদপ্তরের জমি দখল করে পাথর খাদানের অভিযোগ উঠেছে। পুরুলিয়ার বরাবাজারের লটপদা অঞ্চলের ধারগ্রাম মৌজার ওই খাদানে বছরের পর বছর ধরে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। রোজ ফাটছে ডিনামাইট। পাথরের কণা উড়ছে বাতাসে। দমবন্ধ করা পরিবেশ। বাড়ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। ধুলোয় ঢাকছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। পাথর বোঝাই ওভারলোডেড গাড়ি যাতায়াতে দফারফা হয়ে গিয়েছে গ্রামীণ রাস্তা। ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জনজীবন। সঙ্কটে বন্যপ্রাণও। সমস্যার কথা তুলে ধরে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে অন্তত কয়েক দিস্তা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন বাসিন্দারা। সমস্যার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিধায়ককেও। কিন্তু, পরিস্থিতির বদল হয়নি একটুও। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, সময়ে ‘মান্থলি’ পেলে নীরব থেকে যায় সব মহলই! বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না কেউই।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বরাবাজারের লটপদা অঞ্চলের ধারগ্রাম, তালাডি, সরবেড়িয়া সহ প্রতি মৌজাতেই কয়েকশো হেক্টর করে বনভূমি রয়েছে। আগে এইসব এলাকায় বনদপ্তরের তরফে প্রতি বছর নিয়ম করে বনসৃজন করা হতো। কিন্তু, গত এক দশকে সেই ছবি একেবারে বদলে গিয়েছে। বরং বনদপ্তরের জমি দখল করে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ পাথর খাদান। চোখের সামনে জমি দখল হচ্ছে দেখেও কোনও এক ‘অজ্ঞাত’ কারণে বনদপ্তর ছিল সম্পূর্ণ নীরব। বিষয়টি পুলিস প্রশাসনেরও অজানা ছিল না। তবে, ২০২০ সাল নাগাদ তত্কালীন জেলা পরিষদের সভাধিপতির নেতৃত্বে শুরু হয় ‘অবৈধ’ খাদান উচ্ছেদ অভিযান। বনদপ্তর ও পুলিসি তত্পরতায় অবৈধ পাথর খাদান বন্ধও হয়ে যায়। কিন্তু, বনভূমিতে চলা সত্ত্বেও ধারগ্রামের এই একটি খাদানের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি প্রশাসন। এখানেই ‘লেনদেন’-এর তত্ত্ব খাড়া করছেন বাসিন্দারা। লেনদেনের প্রশ্নে অবশ্য শাসক-বিরোধী সবাই এক।

    প্রশাসনের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ওই পাথর খাদানটিকে সরকারের তরফে লিজ দেওয়া হয়েছে। এই সংক্রান্ত কাগজপত্র রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ১৪ জুলাই ১৯৬৬ সালের ‘ক্যালক্যাটা গ্যাজেটে’ (নোটিফিকেশন নম্বর ২০৬০) যে জমি বনদপ্তরের নামে রয়েছে, সেই জমিতে কীভাবে অ-বনজ কাজকর্ম চলতে পারে? সূত্রের খবর, ওই জমির চরিত্র বদলে নেওয়া হয়েছে। যা ১৯৯৬ সালের গোদাবর্মন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী। ওই রায়ে স্পষ্ট বলা রয়েছে, একবার যে জমি বনদপ্তরের নামে নোটিফায়েড, সেই জমির চরিত্র কোনওভাবেই বদল করা যায় না। তাহলে তা হল কীভাবে? স্থানীয়দের অনুমান, এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে বিরাট এক রহস্য। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের ‘বিশেষ’ সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ কখনও সম্ভবপর নয়। 

    স্থানীয় বাসিন্দা সমীর মাহাত, সুনীল মাহাত, ভগু মাঝিদের দাবি, ওই খাদান ক্রমশই গ্রাস করছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। প্রতিদিন কয়েকশো ওভার লোডেড গাড়ি যাতায়াত করছে গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে। দফারফা হয়ে গিয়েছে গ্রামীণ রাস্তার। রাস্তা দিয়ে সবসময় ধুলো উড়ছে। যাতায়াত করা যাচ্ছে না। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজ যেতে পারছে না। পরিবেশ দূষণের কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। কত জায়গাতেই না অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু, আমাদের সমস্যায় কেউই কর্ণপাত করছে না। 

    এনিয়ে কংসাবতী দক্ষিণ ডিভিশনের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, আমাদের কাছে যতদূর কাগজপত্র রয়েছে, নিয়ম মেনেই ওই খাদানের জমির চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানি। এর বাইরে কোনও অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)