• বাংলার মেয়েদের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নপূরণ করছে উপেক্ষিত মালবহালের রুক্ষ-শুষ্ক মাঠ
    বর্তমান | ১২ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: রূপনারায়ণপুরে হিন্দুস্থান কেবলস কারখানার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে পাকা রাস্তা। কারখানার জমির উল্টো পাশেই মালবহাল ফুটবল মাঠ। অযত্নে পড়ে থাকা নিতান্ত সাধারণ এক মাঠ। সেই মাঠেই ফলছে ফুটবলের সোনা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বাংলার মহিলা ফুটবলের আশা জাগাচ্ছে এই মাঠ। এখান থেকেই তালিম নিয়ে ইন্ডিয়া টিমে ২০১৯ সালে সুযোগ পেয়েছিলেন পূজা মুর্মু ও অদ্রিজা সরখেল। ২০২৩ সালে ইন্ডিয়া টিমে খেলার সুযোগ পান তানিয়া কান্তি। ২০২৪ সাল থেকে ইন্ডিয়া টিমের হয়ে খেলছেন অরুণা বাগ। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু মেয়ে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলিতে। একাধিক মেয়ে নাম করা ফুটবল ক্লাবেও খেলছেন। এত সাফল্যের পরও যেন ‘প্রদীপের নীচে অন্ধকার’ হয়েই থেকে গিয়েছে মাঠটি। উপেক্ষিত প্রশিক্ষকও। মাঠে নেই মহিলাদের জন্য উপযুক্ত শৌচালয় বা পানীয় জলের ব্যবস্থা টুকুও। 

    ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর বাড়িতে বসেই টিভি দেখছিলেন মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষক সঞ্জীব বাউরি। সালানপুর থানার মালবহালেই তার বাড়ি। পাশেই বসে তাঁর আট বছরের মেয়ে রুপালি। মার্শাল আর্টে এখন আর ভবিষ্যৎ নেই। তা হলে কোন খেলায় মেয়ে সাফল্য পাবে! ভাবছিলেন সঞ্জীব।  হঠাৎ চোখে পড়ে টিভিতে খেলা চলছে ঝাড়খণ্ড বনাম হারিয়ানা মহিলা ফুটবল। তা থেকেই মেয়েকে ফুটবলার তৈরি করার স্বপ্ন দেখা শুরু সঞ্জীবের। সেদিন বিকেলেই মালবহাল মাঠে মেয়েকে নিয়ে হাজির হন তিনি। বাবা-মেয়ের ফুটবলের কসরত দেখে ভিড় জমায় এলাকার অন্যান্য মেয়েরাও। সেই থেকে শুরু মালবহালের মাঠ মহিলা ফুটবলার গড়ার কারিগর হয়ে ওঠে।  ২০১৭ সালে এল বিরাট সাফল্য। বাংলা দলের আন্ডার ফোর্টিন মহিলা ফুটবল দলের সুযোগ পেল এখান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া রূপালী বাউরি, পূজা মুর্মু, অদ্রিজা সারখেল, সুপ্রিয়া হাঁসদা মোনালিসা মারান্ডি। সেবার বাংলার মহিলা ফুটবল দল উন্নতমানের ফুটবল খেলে সবার নজর কাড়ে। বাংলার মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম পরিচিত হয় মালবহাল। দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা যারা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে তারা মালবহালে এসে খেলার প্রশিক্ষণ নিতে আর্জি জানায় সঞ্জীবকে। মেয়েদের ও তাদের অভিভাবকদের আর্জিতে আবাসিক শিবির করে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। ২০১৯, ২০২৩ ও ২০২৪,  ৩ বছর ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের সুযোগ পায় এখানকার মেয়েরা। ২০২৫ সালের মহিলা বাংলা দলে এখানকার তুলসি লোহার ও রূপালী বাউরি খেলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা মহিলা দলের প্রতি সদস্যকেই কনস্টেবল এর চাকরি দেন। চাকরি  পেয়েছে রুপালি ও তনুশ্রীও। রূপালী বলেন, ১৪ বছর বাবার কাছে এই মাঠে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। ১১ বার ন্যাশনাল খেলেছি, চাকরিও পেয়েছি। এবার স্বপ্ন ইন্ডিয়া টিমের সুযোগ পাওয়া।

    শিক্ষক সঞ্জীব বাউরি বলেন, ‘কষ্ট করে প্রশিক্ষণ শিবির চালাচ্ছি আমরা একটি ক্লাব তৈরি করেছি মাতৃভূমি সকার ক্লাব, মালবহাল। আমাদের টিম বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে যে অর্থ উপার্জন করে তা দিয়েই প্রশিক্ষণ চলছে। সরকারি সাহায্য পেলে এবং মাঠের পরিকাঠামো উন্নয়ন হলে আরও ভালো মানের ফুটবলার তৈরি করা যাবে।’ উত্তরবঙ্গ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন সুস্মিতা রায়, সুষুম ওঁরাও। তারা বলেন, ‘ভালো ফুটবলার হয়ে পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে চাই।’  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)