শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ মোশনে তদন্তের নির্দেশ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ জুন ২০২৫
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর কুমন্তব্যের জেরে বুধবারও তেতে উঠল রাজ্যের বিধানসভা চত্বর। গতকালই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব দিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নোটিস দিয়েছিলেন রাজ্যের শাসকদলের মন্ত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে ওইদিন শুভেন্দুর আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্পিকার। বুধবার সেই নোটিসের প্রেক্ষিতে প্রিভিলেজ কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, চলতি অধিবেশনেই সেই রিপোর্ট জমা পড়তে চলেছে। কিন্তু স্পিকারের সেই তদন্তের নির্দেশকে মানতে রাজি নন বিজেপি বিধায়করা। তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ওয়াকআউট করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি ও তার পরবর্তী সময়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের ডেরা ভেঙে পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত। এই ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরাক্রমকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজ্য বিধানসভায় মঙ্গলবার বিশেষ প্রস্তাব পেশ করা হয়। সেখানে সেনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পহেলগামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রের ত্রুটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই বিধানসভা থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শাহবাজ শরিফও পাকিস্তানের এত প্রশংসা করেন না। পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং করে গিয়েছেন। আপনি নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহকে ছোট করছেন।’
সেই সঙ্গে বিজেপি বিধায়করা বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের কুমন্তব্য নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবের দাবি করেন। কিন্তু স্পিকার সেই মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ করে দেন। তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিরোধী দলের বিধায়করা বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ দেখান।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের মত, এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেন্দুর কুমন্তব্যের সঙ্গে তুলনা টেনে বিজেপি অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গ টেনে আনলেও অনুব্রত রাজ্যের কোনও মন্ত্রী বা বিধায়ক নন। আর তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনায় কেন্দ্রের নিরাপত্তার গাফিলতির প্রসঙ্গ তুললেও তিনি পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে কোনও কথাই বলেননি। বরং পাকিস্তানে জঙ্গিদের আস্তানায় হামলা চালানোর জন্য তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। ফলে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যে রাজ্যের মানুষের মধ্যে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে এবং এই মন্তব্য যথেষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
উল্লেখ্য, এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে এই অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে ক্ষুব্ধ হন শাসকদলের মন্ত্রী ও বিধায়করা। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, সচেতনভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মমতার মন্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে শাসকদলের মন্ত্রীরা স্পিকারের কাছে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁরা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব দেন। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস স্পিকারের কাছে গিয়ে এই স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস জমা দেন। স্পিকার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন বলে রাজ্যের মন্ত্রীদের আশ্বস্ত করেন। যথারীতি বুধবার স্পিকার বিষয়টি নিয়ে প্রিভিলেজ কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।