১০৮টি তীর্থক্ষেত্রের জলে স্নান করানো হল জগন্নাথ দেবকে
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ জুন ২০২৫
আচার ও রীতি মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে বুধবার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পালিত হয়েছে স্নানযাত্রার অনুষ্ঠান। ১০৮টি তীর্থক্ষেত্রের জলে স্নান করানো হয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রাকে। স্নানযাত্রার জন্য মন্দিরের দক্ষিণ দিকে একটি বিশেষ স্নানবেদি নির্মিত হয়েছে। সেখানেই সম্পন্ন হয় স্নান। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বাড়ির বাগানের আম ও কাঠাল মন্দিরে পাঠিয়েছিলেন। স্নানযাত্রার পরে দুপুরে ভোগের সঙ্গে সেই ফল নিবেদন করা হয়। আগামী ২৭ জুন রথযাত্রা। তার আগে আজ, বৃহস্পতিবার দিঘায় রথযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক ডেকেছে নবান্ন। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তা, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক থেকে শুরু করে ইসকনের প্রতিনিধিরাও। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীও থাকতে পারেন।
বুধবার সকালে নির্দিষ্ট সময়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে মন্দির থেকে বের করে আনা হয়। সবার আগে বের করা হয় সুদর্শন চক্র, তারপর একে একে বলরাম, সুভদ্রা ও সব শেষে প্রভু জগন্নাথকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় স্নান মণ্ডপে। সেই সময় খোল–খরতালের ধ্বনীতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল গোটা মন্দির চত্বর। স্নানের আগে নিম কাঠের তিন মূর্তিতে লাগানো হয় তুলসী। তারপর সকাল ১১টা নাগাদ শুরু হয় স্নানযাত্রা। ১০৮টি তীর্থক্ষেত্রের জলের সঙ্গে মেশানো হয় কাঁচা দুধ, আতর ও চন্দন। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে সিল্কের কাপড় দিয়ে আবৃত করে শুরু হয়ে স্নান পর্ব। বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ ও কীর্তন–শঙ্খ ধ্বনীতে সম্পন্ন হয় স্নানযাত্রা। স্নানের পর ১০৮টি তুলসী পাতা জগন্নাথ দেবের চরণে অর্পণ করা হয়।
এরপর তাঁদের পাহাণ্ডী বিজয়ের মাধ্যমে মন্দিরে নিয়ে যান ইসকনের সন্ন্যাসীরা। মন্দিরে জগন্নাথ দেব ও বলরামকে গজবেশ ও সুভদ্রাকে পদ্মবেশে সজ্জিত করা হয়। এরপর তাঁদের ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন করেন সেবায়েতরা। বিকেল ৩টি থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ভক্তরা জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার দর্শন পান। এ দিন ৯টার পর থেকে আগামী প্রায় ১৫ দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকবেন জগন্নাথ ও তাঁর দুই ভাই–বোন। কারণ কথিত আছে, স্নানের পর প্রবল জ্বর আসে জগন্নাথের। তাই সেই সময় ভক্তদের দর্শন দেন না তিনি। এই সময় মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকবে। ২৬ তারিখ খুলবে মন্দিরের দরজা। সে দিন নবযৌবন ও নেত্র উৎসব পালিত হবে। তারপরের দিনই রথযাত্রা। সেদিন দুই ভাই–বোনকে নিয়ে মাসির বাড়িতে যাবেন জগন্নাথ দেব।
বুধবার সকালেই নিজের বাড়ির গাছ থেকে আম, কাঁঠাল পাড়িয়ে দিঘায় ইসকন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, স্নানযাত্রার পর মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো ফল ছাপ্পান্ন ভোগের সঙ্গে প্রভুকে নিবেদন করা হয়েছে। দ্বারোদ্ঘাটনের পর এই প্রথম দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রা পালিত হবে। তার আগে আচার ও রীতি মেনে পালিত হয়েছে স্নানযাত্রার অনুষ্ঠান। এ দিন স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে জগন্নাথ মন্দিরে ভক্তদের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো।