ভারত-পাক সংঘাত এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিদেশের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার রাতে সাতটি বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এবার সেই নৈশভোজ পর্বকে ‘সময় নষ্ট’ বলে কটাক্ষ করল তৃণমূল। উল্লেখ্য, বাংলার শাসকদলের তরফে ওই নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিনিধিদলের সদস্য, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নৈশভোজের পরে তিনি ঘনিষ্ঠমহলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলেই খবর। কেন্দ্রের নির্দেশে বিদেশের মাটিতে পাড়ি দেওয়া প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে অভিষেকের ‘পারফরমেন্স’ মন কেড়েছিল ভারতবাসীর। এবার সেই অভিষেকেরই এই নৈশভোজ পর্বকে বিরক্ত লাগার কারণ কী? প্রসঙ্গত, লোককল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের চত্বরে সাতটি টেবিলের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেখানেই বসেছিলেন প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা। তৃণমূলের বক্তব্য, সাংসদ অভিষেক যে টেবিলে বসেছিলেন, সেই টেবিল পর্যন্তই যাননি প্রধানমন্ত্রী। সারেননি সৌজন্য-সাক্ষাৎও! তৃণমূলের মতে, নৈশভোজে ভোজ এবং মূলত হাসি-মশকরা ছাড়া গঠনমূলক কিছু হয়নি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর এই দ্বিচারিতা কেন? তার একটি ব্যাখ্যা মিলেছে তৃণমূল সূত্রে। সেই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ওই সাতটি প্রতিনিধিদলের সদস্যদের প্রত্যেককেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর মনোনীত করেছিল। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন একমাত্র অভিষেক, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর অনুরোধে তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সফর শেষে আবার মন্ত্রী রিজিজুর দফতর থেকেই ফোন করে অভিষেককে প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে থাকার অনুরোধ জানানো হয়। তাতে সাড়া দিয়ে অভিষেক নৈশভোজেও যান। কিন্তু নৈশভোজ কেবলই ‘সময় নষ্ট’! সে কারণেই ‘বিরক্ত’ অভিষেক সেখানে এক কাপ চা ছাড়া আর কিছুই খাননি বলেও তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে। এরই মাঝে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিজেপি কর্তৃক প্রকাশিত নৈশভোজের ভিডিও।
তাতে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের সাংসদ শশী তারুরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের ছবি, গুলাম নবি আজাদের পিঠ চাপড়ে একগাল হেসে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপির সমালোচক অনজনা চতুর্বেদীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি দেখা গিয়েছে, কানিমোঝি মোদীকে একটি দক্ষিণী বস্ত্র উপহার তুলে দিচ্ছেন। কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা, সলমন খুরশিদ, মণীশ তিওয়ারিদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের ছবি দেখা গিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ভিডিওতে অনুপস্থিত অভিষেকই। সামগ্রিক এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর দ্বিচারিতা এবং নৈশভোজে গঠনমূলক আলোচনার অভাবে কার্যত ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত তৃণমূল। যদিও বিজেপির ভাষায়, এই ধরণের নৈশভোজ আদতে ‘সংসদীয় রাজনীতির শিষ্টাচার’। এই ধরণের অনুষ্ঠানে বিশদ আলোচনার কিছু থাকে না, কোনও নির্ধারিত আলোচ্যসূচিও থাকে না। তার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের বক্তব্য, অন্যান্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এই প্রতিনিধিদলের তফাত রয়েছে। এই নৈশভোজকে ‘অনুষ্ঠান’ হিসেবে না দেখে ‘কর্মসূচি’ হিসাবে দেখা উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর।