• গ্রেপ্তার আরিয়ান ও তাঁর ১৩ বছরের বোন, এখনও অধরা শ্বেতা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ জুন ২০২৫
  • হাওড়ার বাঁকড়ায় তরুণীকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শ্বেতা খানের ছেলে আরিয়ান ও ১৩ বছরের মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কলকাতার গল্ফগ্রিন এলাকা থেকে আরিয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। তার আগে কলকাতার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত কিশোরীকে তবে এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত শ্বেতা খানের হদিশ পায়নি পুলিশ। ছেলে–মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মায়ের খোঁজ পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

    অন্যদিকে শ্বেতার মাকে আটক করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, শ্বেতার দুটি বিয়ে। প্রথম পক্ষের এক ছেলে ও এক মেয়ে। আরিয়ান ও ঈশিকা। কয়েকদিন আগে ঈশিকা আত্মহত্যা করে। শ্বেতার প্রাক্তন স্বামীর অভিযোগ, মায়ের জন্যই আত্মহত্যা করেছে মেয়ে। অভিযুক্ত কিশোরী শ্বেতার দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে কি না তা স্পষ্ট নয়। অনেকের অনুমান, সে শ্বেতার পালিত কন্যাও হতে পারে। সোদপুরের নির্যাতিতার তরফে দায়ের করা এফআইআর–এ এই কিশোরীর নাম উল্লেখ ছিল। অর্থাৎ অত্যাচারীদের তালিকায় ১৩ বছরের ওই কিশোরীর নামও রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে জুভেনাইল বোর্ডে হাজির করিয়েছে পুলিশ।

    উল্লেখ্য, কাজ দেওয়ার নাম করে গত ছয় মাস ধরে হাওড়ার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে আটকে রেখে সোদপুরের এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শ্বেতা খান, তাঁর ছেলে আরিয়ান খান ও কিশোরী মেয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁকে দিয়ে জোর করে পানশালাতেও কাজ করানো হয়। এমনকী পর্ন ভিডিও বানানোর জন্যও চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় চলে অকথ্য অত্যাচার। ব্যাপক মারধরের পাশাপাশি চুল কেটে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে শ্বেতাদের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার ওই তরুণী কোনওভাবে বাড়িতে পালিয়ে আসেন। এরপরই মা–ছেলের কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসে। যদিও ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই পলাতক ছিলেন অভিযুক্তরা। পাঁচ দিন ধরে তল্লাশির পর অবশেষে আরিয়ান ও তাঁর বোনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু শ্বেতা এখনও অধরা। জানা গিয়েছে, আরিয়ানের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয়েছিল নির্যাতিতার। তাঁকে বিশ্বাস করেই কাজের আশায় তাঁর বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তরুণী। বাঁকড়ায় শ্বেতার প্রতিবেশীদের অভিযোগ, প্রোডাকশন হাউস খুলে পর্ন ভিডিয়োর ব্যবসা করতেন মা-ছেলে। কাজ দেওয়ার নাম করে তরুণীদের নিয়ে গিয়ে দেহব্যবসা করানোর মতো গুরুতর অভিযোগও তাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে।

    মঙ্গলবার রাতে নির্যাতিতা তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাঁকে সাগর দত্ত হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে স্থানান্তর করানো হয়। এর আগে তাঁকে সার্জিকাল ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা চলছিল। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করে মঙ্গলবার রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমারকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। তিন দিনের মধ্যে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্যাতিতার শারীরিক এবং মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছে কমিশন।

    শ্বেতার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানোর জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর হলেও এখনও পর্যন্ত ফ্ল্যাটে তল্লাশি হয়নি। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে হাওড়া পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) সুরিন্দর সিংহ জানিয়েছেন, সোদপুরের ওই তরুণী ছাড়া আর কেউ এখনও শ্বেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাননি।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)