সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
উপাচার্য নেই এক বছরের বেশি সময় ধরে। ফিনান্স অফিসার, কন্ট্রোলার অব এগজামিনেশন, ডেপুটি কন্ট্রোলার, সিকিউরিটি অফিসার, এস্টেট অফিসারও নেই দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারও কর্মচারী বিক্ষোভের জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্ছন্নে চলে যাওয়ার এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। আধিকারিকহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের পচন এ বার পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
হিন্দি এবং নেপালি বিভাগে শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে করুণ দশা সোসিওলজি বিভাগের। মাত্র একজন স্থায়ী শিক্ষকের ভরসায় চলছে এই বিভাগটি। এমন নয় যে, ছেলেমেয়েদের মধ্যে সোসিওলজি পড়ার আগ্রহ নেই।
বরং প্রতিটি সেমেস্টারে ৬০টি করে আসন থাকলেও বাস্তবে বেশি ছেলেমেয়ে পড়ছেন। যাঁরা আগের সেমেস্টার কমপ্লিট করতে পারেননি, তাঁদের এখনও সেটি পড়তে হচ্ছে। মাত্র একজন শিক্ষককে চারটি সেমেস্টারের ক্লাস নিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে লাগোয়া এলাকার কলেজগুলি থেকে শিক্ষকদের ডেকে আনতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন একমাত্র আধিকারিক ডিন অব সায়েন্স মহেন্দ্রনাথ রায়। তিনি আবার কলা বিভাগেরও ভারপ্রাপ্ত।
তিনি বলেন, ‘স্থায়ী পদে নিয়োগ করতে গেলে এগজিকিউটিভ কাউন্সিলে প্রস্তাব পাশ করাতে হবে। নতুবা নিয়োগ করা সম্ভব নয়। দেড় বছর হতে চলল আমাদের উপাচার্য নেই। সেই কারণে এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সভা হচ্ছে না। নিয়োগ কোথা থেকে হবে?’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিন অব সায়েন্স শিক্ষকের সমস্যা মেটাতে শূন্যপদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। গেস্ট লেকচারার নিয়োগ করে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। সেখানেও সমস্যা। গেস্ট লেকচারারদেরও ইউজিসি নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন।
তেমন শিক্ষক খুঁজে পেতেও সমস্যা হচ্ছে। এমনিতেই আদালতের ওবিসি সংক্রান্ত রায়ের জের এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও প্রথম সেমেস্টারে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব হয়নি রাজ্যের উপাচার্যহীন কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই। তার সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলি।
সেখানে ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। তার মধ্যে শিক্ষকদের শূন্যপদ যেন সোনায় সোহাগা হয়ে গিয়েছে। সোসিওলজিতে একটা সময়ে সাত জন শিক্ষক ছিলেন। তার পরে একে একে অবসর নিতে শুরু করেন। এই অবসরের প্রক্রিয়াও রাতারাতি শুরু হয়নি। গত পাঁচ বছর ধরে চলেছে।
তৎকালীন উপাচার্যরা সব জেনেও কেন চোখ-কান বুজে ছিলেন সেটা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। একই ঘটনা হিন্দি এবং নেপালি বিভাগেও। ফলে ছাত্রছাত্রীরা কী শিখছেন আর সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে চাকরির খোঁজে নামলে কী পরিণতি হবে, সেটা জানা নেই কারও।
সোসিওলজি বিভাগেরই এক কর্মচারী বলেন, ‘কেবল শিক্ষক নেই তা নয়, বহু বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারীও নেই। সেটাও নিয়েও কারও মাথাব্যাথা নেই। এখন গরমের ছুটি চলছে। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে গেলে কর্তৃপক্ষকে যে পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে সেটা নিয়েও কারও কোনও চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে মনে হয় না।’