প্রকাশ্য রাস্তায় ৪২ বার কুপিয়ে খুন, বহরমপুরে সেই সুতপা খুনে সুশান্তর ফাঁসি রদ
আজ তক | ১২ জুন ২০২৫
বহরমপুরে সেই সুতপা চৌধুরী খুনের ঘটনা মনে আছে? ২০২২ সালের ২ মে সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় এক যুবক প্রেমিকাকে প্রকাশ্য রাস্তায় এলোপাথাড়ি ভাবে কুপিয়ে খুন করেছিল। সেই মামলায় ফাঁসির সাজা দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। দোষী যুবক সুশান্ত চৌধুরীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
বহরমপুরের ব্যস্ত রাস্তায় স্কুল-কলেজ ফেরত ছাত্রছাত্রীরা হাঁটছে, কেউ চটপটির দোকানে দাঁড়িয়ে, কেউ আবার রিকশার জন্য হাত তুলছে। আচমকা চিৎকার। তারপর একটার পর একটা ছুরির কোপ। এক তরুণী রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রইল পিচঢালা রাস্তায়। নাম, সুতপা চৌধুরী। বয়স মাত্র ১৯। সেদিন তাঁর শরীরে ছুরির গলা ফেলে যে দাঁড়িয়ে ছিল, সে আর কেউ নয়, তার ‘প্রেমিক’ পরিচয় দেওয়া সুশান্ত চৌধুরী। বয়স মাত্র ২১। এতটাই ভয়ানক ছিল সেই খুন, যে প্রত্যক্ষদর্শীরা আজও রাতে ঘুমোতে পারেন না।
সুতপা ছিল স্বপ্নে ভরা মেয়ে
মালদার মেয়ে সুতপা, বহরমপুরে মেসে থেকে পড়াশোনা করছিলেন। নিজে দাঁড়িয়ে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চেয়েছিলেন। কারও ক্ষতি করেননি। শুধু ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তার ‘না’ বলার সাহসকেই থামিয়ে দিতে চেয়েছিল সুশান্ত। খুনের দিন, মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বড় খেলনা বন্দুক দিয়ে ভয় দেখিয়ে ছুরি চালায় সে।
নিম্ন আদালতের ফাঁসি, হাইকোর্টে রদ
২০২৩ সালে বহরমপুরের আদালত এই ঘটনার জন্য সুশান্তকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অনেকেই বলেছিলেন, এই সাজাই তো ন্যায্য। কিন্তু ঠিক এক বছর পর, ২০২৪ সালের ১২ জুন, কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়—ফাঁসি নয়, আমৃত্যু কারাবাস হবে। সঙ্গে স্পষ্ট করে বলা হয়, সুশান্ত ৪০ বছর পর্যন্ত মুক্তির জন্য কোনও আবেদন করতে পারবে না। মানে, যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে, ততদিন তাকে কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটাতে হবে।
‘২১ বছরের বয়সে খুন করেছিল, এখন ২৪’—এটাই রেহাই?
অনেকে বলছেন, হাইকোর্ট হয়তো বয়স দেখে কিছুটা মানবিক হওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সুতপার পরিবার বা বন্ধুদের কাছে বয়স কোনও যুক্তি হতে পারে না। খুনের ধরন, হত্যাকারীর মনোভাব—সব কিছু ছিল ঠান্ডা মাথার। এমনটা হঠাৎ হয় না। চুপচাপ প্ল্যান করে, ভয় দেখানোর বন্দুক হাতে নিয়ে, পথ আটকে, ছুরি চালিয়ে খুন করা যায় না যদি মনের ভিতর থেকে না আসে ‘ও আমার না হলে কাউকে হতে দেব না’—এই ভয়ঙ্কর মানসিকতা। ৪০ বছর পর্যন্ত সুশান্ত কোনও আবেদনও করতে পারবে না। এটাই আদালতের এক কঠোর বার্তা—তুমি যদি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে বাঁচতে না দাও, তবে তোমার বাঁচার অধিকারও সীমিত করে দেওয়া হবে।