অর্ণব আইচ: সিঁড়ির দিকে পা। বারান্দার কাছে পড়ে দেহ। গলায় জড়ানো শাড়ি। হাতের চুরি গায়েব। মুচিপাড়ার সার্পেনটাইন লেনের নিজের বাড়িতে এভাবেই পড়েছিলেন বৃদ্ধা নমিতাদেবী। বন্ধ ছিল বাড়ির বাইরের গেট। তা দেখেই পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। এরপরই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি পরিচিত কারও ডাকে সাড়া দিয়ে গেট খুলেছিলেন নমিতাদেবী? সেই পরিচিত বা পরিচিতরা তাঁকে খুন করেন? তারপর লুটপাট চালিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়? তদন্তে পুলিশ।
মুচিপাড়ার সার্পেনটাইন লেনের বাসিন্দা নমিতাদেবী বাড়িতে একাই থাকতেন। স্বামী পোর্টট্রাস্টে কর্মরত ছিলেন। মারা যান ২০১৩ সালে। ছিল দুই ছেলেও। তাঁরাও কয়েক বছরের ব্যবধানে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। একা হয়ে পড়েন বৃদ্ধা। পেনশন বাবদ বৃদ্ধা ২০-২৫ হাজার টাকা পেতেন। তা দিয়েই ঘর চালাতেন। নমিতাদেবী দোতলা বাড়ির একতলায় একটি ঘর, রান্নাঘর নিয়ে থাকতেন। বাকি ঘর থাকত তালাবন্ধ।
স্বামী, ছেলেদের স্মৃতি ভুলতে ও নিজের খরচ চালাতে বৃদ্ধা ঘরের অনেক আসবাবপত্র ফেরিওয়ালাদের ডেকে বিক্রি করে দিচ্ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। প্রশ্ন এখানেই তাহলে কি কোনও ফেরিওয়ালা ঢুকে বৃদ্ধাকে খুন করল? তবে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বৃদ্ধা জানলা দিয়েই কথা বলতেন। সহজে গেট খুলতেন না। তাহলে কি মঙ্গলবার রাতে বা বুধবার সকালের দিকে পরিচিত কেউ এসেছিল বাড়িতে? বা কোনও ফেরিওয়ালার বৃদ্ধার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিল? যাকে দেখে গেট খুলে দেন নমিতাদেবী? তারপর সে খুনের পর লুটপাট করে পালিয়ে যায়।
কিন্তু কেউ দেখতে পেলেন না কেন? মুচিপাড়ার সার্পেনটাইন লেনের রাস্তা সাপের মতো আঁকাবাঁকা। একটু মোড় ঘুরলেই আততায়ীকে দেখা মুশকিল। সেই সুযোগ নিয়েই কাজ সেরে দুষ্কৃতী পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। সমস্ত সম্ভাবনা মাথায় রেখে তদন্তে চালাচ্ছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, বুধবার রাতে মুচিপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার হয়। লন্ডভন্ড অবস্থায় ছিল আলমারি ও ঘরের বিভিন্ন অংশ। ফলে সোনা বা টাকা অথবা অন্য কোনও মূল্যবান বস্তু লুটপাট হয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের। মঙ্গলবার গভীর রাত বা বুধবার সকাল নাগাদ তাঁকে খুন করা হয়েছে অনুুমান পুলিশের।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, খুনের পর বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায় আততায়ী। লুটপাটের পর বৃদ্ধাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ তদন্তকারীদের। পুলিশ কুকুরের সাহায্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে খুনির সন্ধান চালান গোয়েন্দারা। এলাকার প্রত্য়েকটি সিসিটিভি ফুটেজের খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।