• নিজের জালে জড়িয়েই গ্রেপ্তার ফুলটুসি! কীর্তি ফাঁস করল পুলিশ
    প্রতিদিন | ১৩ জুন ২০২৫
  • অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: ছেলে আরিয়ান খান ধরা পড়তেই পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন শ্বেতা খান ওরফে মহসিনা বেগম ওরফে ফুলটুসি। সেই কারণে বুধবার আলিপুর আদালতে আইনজীবীদের কাছে পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন। গোপন সূত্রে সেই খবর পায় পুলিশ। এরপর বুধবার রাতে আলিপুর আদালত চত্বরে পৌঁছতেই একেবারে হাতেনাতে ফুলটুসিকে ধরে ফেলেন তদন্তকারীরা। ফুলটুসিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, অত্যন্ত চতুর এই মহিলা। পালানোর সময় পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের জালে ধরা পড়ার পরও পুলিশকে নানারকম ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে চলেছে ফুলটুসি।

    পুলিশ সূত্রে খবর, বাঁকড়ার ফকিরপাড়ায় যেখানে ফুলটুসকিদের ফ্ল্যাট সেখানে ইদের সুযোগ নিয়ে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গত ৭ জুনই পালিয়ে যায় ফুলটুসি ও তার ছেলে আরিয়ান। তারা আলাদা আলাদা জায়গায় পালিয়েছিল। পালানোর সময় থেকেই অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে ফোন সুইচ অফ করে পুলিশকে নাকানিচোবানি খাওয়ায় মা ফুলটুসি ও ছেলে আরিয়ান। শুধুমাত্র পুলিশের গোপন সূত্রের উপর ভিত্তি করে মা ও ছেলেকে ধরতে ডোমজুড় থানা ও হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা নরেন্দ্রপুর, নাদিয়াল-সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় তল্লাশি চালায়। পুলিশ সূত্রে খবর, মা ও ছেলে দু’জনেই ঘনঘন আলাদা আলাদাভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। নিজেদের ফোন বন্ধ রেখে অন্যের ফোন থেকে মা ও ছেলে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু অবশেষে দু’জনকেই কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মোবাইলের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও গোপন সূত্রের খবরে মা ও ছেলেকে জালে তুলতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার হাওড়া আদালত তাকে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়।

    অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ধরা পড়ার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীদের প্রতি মুহূর্তে বিভ্রান্ত করে চলেছে ফুলটুসকি। পুলিশের ধারাবাহিক জেরায় সে এমন উত্তর দিচ্ছে, যার অধিকাংশই বিভ্রান্তমূলক। পুলিশ ফুলটুসকির দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখছে অধিকাংশই মিথ্যে। এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানালেন, অত্যন্ত চতুর ওই মহিলা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ক্রমাগত মিথ্যা তথ্য দিয়ে চলেছে।

    তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, মূলত বার ডান্সারের কাজে লাগানোর জন্যই ফুলটুসি ও তার ছেলে আরিয়ান তরুণীদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেত। সোদপুরের ওই তরুণীকেও বার ডান্সারের কাজ দেওয়ার জন্যই বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়েছিল। নীল ছবি তৈরি, নারী পাচার বা সেক্স র?্যাকেট চালানোর মতো বিষয়ে কোনও তথ্যপ্রমাণ এখনও পর্যন্ত পুলিশের হাতে আসেনি। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ফুলটুসকি ও আরিয়ানকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে কুকীর্তি সামনে আসবে।

    আরও একটি বিষয় পুলিশকে এখনও ভাবাচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া নাবালিকা ও তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া তিন বছরের শিশুকন্যা আদতে কার সন্তান? এনিয়ে এখনও ধন্দ্বে পুলিশ। বুধবার সকালে কলকাতার গল্ফগ্রিন থেকে আরিয়ানকে গ্রেপ্তার করার সময় তার নাবালিকা বোনকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। নরেন্দ্রপুর থেকে ওই নাবালিকা ও তার কাছে থাকা এক তিন বছরের শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নাবালিকা ও শিশুকন্যাকে হোমে পাঠিয়েছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু এদের সঙ্গে ফুলটুসকির সম্পর্ক কী তাই জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ফুলটুসি অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া নাবালিকা তার মেয়ে ও তিন বছরের শিশুকন্যাকে সে লালনপালন করে। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে ফুলটুসির এক মেয়ে আগেই আত্মহত্যা করেছে।

    তারপরও গ্রেপ্তার হওয়া নাবালিকা ও ওই শিশুকন্যার সঙ্গে ফুলটুসকির কী সম্পর্ক, তা পুলিশের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। এদিকে ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের চেষ্টা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত, যৌন নির্যাতন, জোর করে আটকে রাখার ধারায় মামলা রুজু করছে। তদন্তে নেমে আরও একটি বিষয় জানতে পেরেছে পুলিশ। সেটি হল পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে গুলি চালানোর ঘটনায় ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিল ফুলটুসকি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)