• ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, একটু যাচাই করে দেখা হোক ঘটনাটা!’ বলছেন হাওড়ায় ‘তরুণী নির্যাতন ও পর্নকাণ্ডে’ ধৃত শ্বেতা খান
    আনন্দবাজার | ১২ জুন ২০২৫
  • পর্নকাণ্ড এবং সোদপুরের তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শ্বেতা খানকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করানো হবে। তার আগে সকালে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে থানায় ফেরার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে শ্বেতা বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। একটু যাচাই করে দেখা হোক ঘটনাটা।” অভিযোগকারিণী সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “ওই মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। সন্তানও আছে।”

    বুধবার রাতে আলিপুরে ভবানী ভবনের নিকটবর্তী একটি এলাকা থেকে শ্বেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার দুপুরে গল্ফগ্রিন থেকে শ্বেতার পুত্র আরিয়ান খানকেও গ্রেফতার করা হয়। পাঁচ দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরে অবশেষে মা-ছেলে দু’জনকেই পাকড়াও করেন তদন্তকারীরা। ধরা হয়েছে শ্বেতার নাবালিকা কন্যাকে।

    অভিযোগ, হাওড়ার বাঁকড়া এলাকার ফকিরপাড়ার ফ্ল্যাটে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের বাসিন্দা এক তরুণীকে আটকে রেখে শারীরিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন শ্বেতা এবং আরিয়ান। তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চাকরি দেবেন বলে তাঁদের মেয়েকে জোর করে পানশালায় কাজ করিয়েছিলেন আরিয়ান এবং তাঁর মা শ্বেতা। পরে পর্ন ভিডিয়োয় অভিনয় করানোর চাপ দেওয়া হত। রাজি না-হওয়ায় তরুণীকে অকথ্য অত্যাচার করেছেন মা-ছেলে। দিনের পর দিন তাঁকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ।

    গত শুক্রবার লুকিয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে কোনও ভাবে পালিয়ে বাড়ি ফেরেন তরুণী। তার পর থেকে তিনি চিকিৎসাধীন। বর্তমানে সাগর দত্ত হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে রাখা হয়েছে তাঁকে। পরিবার সূত্রে খবর, তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে অভিযুক্ত শ্বেতা এবং পুত্র আরিয়ানের নানা কীর্তি প্রকাশ্যে এসেছে। বাঁকড়ায় শ্বেতার প্রতিবেশীরা তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। প্রোডাকশন হাউস খুলে পর্ন ভিডিয়োর ব্যবসা করার অভিযোগ মা-ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কাজ দেওয়ার নাম করে তরুণীদের নিয়ে গিয়ে দেহব্যবসা করানোর।

    ‘নির্যাতিতা’র পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে মা-ছেলে বেপাত্তা হয়ে যান। তাঁদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

    হাওড়ায় তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করে জাতীয় মহিলা কমিশন। তারা মঙ্গলবার রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমারকে একটি চিঠি পাঠায়। তাতে বলা হয়েছে, তিন দিনের মধ্যে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা দিতে হবে কমিশনকে। তা ছাড়া ‘নির্যাতিতা’র শারীরিক এবং মানসিক চিকিৎসার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করতে বলা হয়। ইতিমধ্যেই আদালতের কাছ থেকে শ্বেতাদের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানোর অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ফ্ল্যাটে বাইরে থেকে নতুন করে একটি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন তদন্তকারীরা। তালা ঝোলানো হয়েছে শ্বেতাদের গ্যারাজ ঘরেও। অভিযোগ, ওই ফ্ল্যাটেই সোদপুরের তরুণীকে আটকে রেখে শারীরিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল।

    ইতিমধ্যেই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আরিয়ান। দাবি করেছেন যে, অভিযোগকারিণী তাঁকে বিয়ে করতে চাইতেন। কারণ, ওই তরুণীর সঙ্গে নাকি স্বামীর সম্পর্ক ভাল ছিল না। শ্বেতার পুত্র এ-ও দাবি করেন যে, তাঁরা কোনও পর্ন ভিডিয়ো বানাতেন না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)