রং বদলেছে। পাল্টেছে রূপ। আসন বিন্যাসও আলাদা রকম। তবে চেনা পথেই সে চলবে পুরনো পরিচয়ে। শতবর্ষের দোরগোড়ায় এসে হারিয়েই গিয়েছিল তিন নম্বর রুটের বাস। টোটো-জর্জরিত রাজপথে তার প্রত্যাবর্তনে খুশি অনেকেই।
আপাতত একটি বাসই শীঘ্রই পথে নামছে। বাসটি নামাচ্ছেন ভদ্রকালীর রাজু সামন্ত। বছর একচল্লিশের যুবক জানান, আবেদনের প্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে এই রুটে বাস চালানোর ছাড়পত্র দিয়েছে হুগলি আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। হলুদের সঙ্গে বাসে অন্য রঙের ছোঁয়া। কৃষ্ণভক্ত রাজু নাম দিয়েছেন ‘বৃন্দাবন এক্সপ্রেস’। তিনি জানান, নিজেই চালাবেন। শ্রীরামপুর থেকে সকাল-সন্ধ্যায় করুণাময়ী হয়ে সল্টলেক। মাঝে শ্রীরামপুর-বাগবাজার।
রাজুর বক্তব্য, ‘‘যাত্রীদের চাহিদা বুঝে সময়সূচি বদলাতে পারি। তেমন হলে আরও একটি বাস নামানোর ইচ্ছা আছে।’’ হুগলির আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘ওই রুটে এক জনই আবেদন করেছিলেন। অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও আবেদন জমা পড়লে সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
তিন নম্বর রুটের যাত্রা শুরু ১৯২৮ সালে। প্রথমে শ্রীরামপুর থেকে জিটি রোড ধরে বালি। পরে ডানলপ। কয়েক বছরের মধ্যে বাগবাজার। শেষে সল্টলেকও। কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল ওই বাস। বাসপ্রতি চালক-কন্ডাক্টর-হেল্পার মিলিয়ে ছিলেন চার জন করে কর্মী। বদলি শ্রমিকও ছিলেন অনেকে। ছ’মিনিট অন্তর বাস মিলত। একে কম ভাড়া, তায় ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছাড় মিলত। এই বাসই ৬৯টি থেকে এক সময় একটিতে ঠেকে। শেষে সেটিও বন্ধ হয়। চালক-কর্মীদের বক্তব্য, অটোর কারণে যাত্রিসংখ্যা কমছিল। টোটোর দাপটে কম দূরত্বের যাত্রী কার্যত শূন্য হয়ে আসে। লোকসানের ধাক্কা সামলানো যায়নি।
এই রুট পুনরুজ্জীবনের দাবিতে আন্দোলন করেছে হুগলি জেলা সিটিজেনস ফোরাম, শ্রীরামপুর মাই লাভ, কলকাতা বাস-ও-পিডিয়ার মতো সংগঠন। মিছিল, অবস্থান, প্রতীকী অনশন, সই সংগ্রহ, নবান্নে স্মারকলিপি জমা— সবই হয়েছে। ফোরামের রাজ্য সভাপতি শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘যিনি বাস নামাচ্ছেন, তাঁকে ধন্যবাদ। টোটো নিয়ন্ত্রণ করে বাস বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারের। সরকারি বাসও নামানো জরুরি।’’
আগে শ্রীরামপুর থেকে ধর্মতলা বা সল্টলেক রুটে সরকারি বাস মিলত। কিন্তু সেই পরিষেবা বেশিদিন মেলেনি। এখন শ্রীরামপুর থেকে সল্টলেক ২৮৫ নম্বর বাস রয়েছে। কিন্তু বাগবাজার বা ধর্মতলা— সরাসরি বাস নেই।
এই রুটের ঐতিহ্য নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে। কেউ ‘হেল্পার’ থেকে পর্যায়ক্রমে কন্ডাক্টর ও চালক হয়েছেন, নিজে বাসও কিনেছেন। স্বদেশি আন্দোলন, স্বাধীনতা লাভের সাক্ষী এই বাস। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময়েও বাসের চাকা থামেনি। শীঘ্রই ফের গড়াতে চলেছে নবরূপে সজ্জিত সেই বাসের চাকা।