• ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত, ছ’মাস ধরে রাস্তায় ঘুরছেন মা
    বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত। দু’জন ব্যবসা এবং একজন বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। প্রায় ছ’মাস ধরে তাঁদের বৃদ্ধ মা ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিলিগুড়ির রাস্তায়। তাঁর নাম হিরণ রায়। বয়স ৭০। তিনি কখনও বাসস্ট্যান্ড, আবার কখনও রেল স্টেশনে রাত কাটাচ্ছেন। অভিযোগ, জমি লিখে না দেওয়ায় হিরণদেবীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে তাঁর ছেলেরা। তিনি এখন সুবিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। 

    শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন শিবমন্দিরে বৃদ্ধার বাড়ি। ইটের দেওয়াল ও টিনের চাল দেওয়া কয়েকটি ঘর রয়েছে। স্বামী ও তিন ছেলে থাকলেও জানুয়ারি মাস থেকে তিনি বাড়িছাড়া। একটি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে কিছু পোশাক নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, স্বামী অসুস্থ। ছেলেরা দেখছে না। তাই পথচারী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে চেয়ে দু’বার খাবার জোগাড় করছি। কখনও তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস, কখনও শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে, আবার কখনও দেবীডাঙা, চম্পাসারিতে রাস্তার ধারে রাত কাটাচ্ছি। 

    বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে আসেন বৃদ্ধা। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, একসময় স্বামী টোটো চালাতেন। এখন তিনি অসুস্থ। বাড়ির ১০ ডেসিমেল জমি স্বামী আমার নামে লিখে দিয়েছেন। সেই জমি নিজেদের নামে করতে চাইছে ছেলে-মেয়েরা। তাঁর অভিযোগ, জমির দলিল দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে পিটিয়েছেন সন্তানরা। এমনকী, প্রাণে মারারও হুমকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সুবিচারের আশায় এসডিও কোর্টে অভিযোগ করেছি। 

    ওই বৃদ্ধার আইনজীবী গৌতম সাহা বলেন, জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা সহ ছেলে ও মেয়েদের বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ করেছেন ওই বৃদ্ধা। ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতেই তাঁর হয়ে আদালতে লড়াই করছি। 

    বৃদ্ধার দুই ছেলে সব্জি ব্যবসায়ী। একজন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। আর মেয়েদেরও বিয়ে হয়েছে। এদিন চেষ্টা করেও অভিযুক্তদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের আইনজীবী সুশান্ত নিয়োগী বলেন, ওই বৃদ্ধার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। ছেলেরা তাঁর উপর কোনওরকম অত্যাচার চালাননি। তিনি নিজেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছেন। বরং কৌশল করে স্বামীর কাছ থেকে জমি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। বৃদ্ধার বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীও অভিযোগ করেছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)