• কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থার চা বাগানে অসন্তোষ, কর্তাদের ঘেরাওয়ে কলকাতা যাচ্ছেন শ্রমিকরা
    বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কর্মীদের আড়াই মাসের বেতন বকেয়া। ছ’সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে জমা পড়ছে না পিএফ। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থার চা বাগানগুলিতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল শ্রমিকদের। অবরোধ, বিক্ষোভে কাজ না হওয়ায় এবার কলকাতায় সংস্থার অফিসে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। ঠিক হয়েছে, ১৫ জুন ট্রেনে দল বেঁধে রওনা হবেন চা শ্রমিকরা। পরদিন, অর্থাৎ ১৬ জুন কেন্দ্রের ভারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওই সংস্থার কলকাতা অফিসের কর্তাদের ঘেরাও করবেন। এনিয়ে ওই সংস্থার অধীনে ডুয়ার্সে যে চারটি বাগান (বানারহাট, কারবালা, নিউ ডুয়ার্স ও চুনাভাটি) রয়েছে, প্রতিটিতেই পোস্টারিং করেছেন ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। কলকাতায় সংস্থার অফিসে ঘেরাও অভিযানের বিষয়ে বুধবার চারটি বাগানের শ্রমিকরা যৌথভাবে জরুরি বৈঠকও করেন। সেখানে ঠিক হয়েছে, প্রয়োজনে কলকাতায় পড়ে থেকে লাগাতার আন্দোলন চলবে।

    নিউ ডুয়ার্স বাগানের কর্মী বাবুন গোপ বলেন, কেন্দ্রের অধীনস্থ চারটি চা বাগান মিলিয়ে প্রায় ছ’হাজার শ্রমিক, কর্মী রয়েছেন। অনেকে পেটের ভাত জোগাড়ে ভিনরাজ্যে কাজে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা আর কতদিন অপেক্ষা করব? সেকারণেই শ্রমিকরা ঠিক করেছেন, এবার আর অবরোধ, বিক্ষোভ নয়, সরাসরি সংস্থার কলকাতার অফিসে অভিযান করবেন। সেখানকার কর্তাদের ঘেরাও করা হবে। ১৫ জুন শ্রমিকরা ট্রেনে উঠবেন। ১৬ তারিখ ওই ঘেরাও অভিযান হবে।  

    এদিকে, কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থার চা বাগানগুলিতে শ্রমিক অসন্তোষ তুঙ্গে ওঠায় চাপে বিজেপি। এর প্রভাব পড়তে পারে ভোটবাক্সে। ফলে ড্যামেজ কন্ট্রোলে মরিয়া গেরুয়া শিবির। এতদিনে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। কলকাতায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা মেটানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

    গত ২৯ মে আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সভা করে গেলেও চা বাগানের উন্নয়ন নিয়ে একটি কথাও বলেননি। যা ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসছে ডুয়ার্সের চা শ্রমিকদের বড় অংশ। প্রধানমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারে আসার আগের দিন বকেয়া মজুরির দাবিতে কেন্দ্রের অধীনে থাকা চা বাগানগুলির শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করেন। তাছাড়া বিক্ষোভ তো চলছেই। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা না হওয়ায় এবার চরম আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছেন চা শ্রমিকরা। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় টি বোর্ডের কর্তাদের সঙ্গেও দেখা করে সার্বিকভাবে উত্তরবঙ্গের চা বাগানের উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানের বিষয়টি দেখার আবেদন জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ।

    এনিয়ে অবশ্য বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েননি তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল সোনার। তাঁর তোপ, চায়ের জেলায় এসে প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের উন্নয়ন নিয়ে একটি কথাও না বলায় মুখ পুড়েছে উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বের। তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা পরিচালিত চা বাগানগুলিতে যেভাবে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে, তাতে ভয় পেয়ে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ টি বোর্ড এবং কেন্দ্রের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু এসবে কোনও লাভ হবে না। চা বাগানের শ্রমিকরা বিজেপির ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলেছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)