সন্দেহ হল সত্যি, কুলটির যুবকের নৃশংস খুনে ধৃত প্রেমিকা
বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: প্রথম থেকেই কুলটির যুবককে নৃশংস খুনের ঘটনায় যাবতীয় সন্দেহের তির গিয়ে পড়েছিল প্রেমিকার উপর। অবশেষ, ঘটনার আটদিন পর সেই প্রেমিকাকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। খুনের পরই মৃতের পরিবারও তার দিকে আঙুল তুলেছিল। সেই মতো দফায় দফায় জেরা করা হয় প্রেমিকা পাম্পি শর্মাকে। কিন্তু, অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে তদন্তকারীদের কাছে বারবার বয়ান বদল বিভ্রান্ত করেছিল সে। শেষে দুঁদে তদন্তকারীরা তার কথার নানা অসঙ্গতিকে একসূত্রে গেঁথে মোটামুটি নিশ্চিত হন, যুবক খুনে অন্যতম অভিযুক্ত পাম্পি। এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েই বুধবার প্রেমিকাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিসের ডিসি (পশ্চিম) সন্দীপ কাররা বলেন, ‘মৃতের পরিবার প্রেমিকার নামেই অভিযোগ করেছিলেন। সেই মতো আমরা তাকে জেরা করেছিলাম। কিন্তু সে আমাদের কাছে বার বার নিজের বয়ান বদল করেছে। ওর কথায় বহু অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে এনিয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
খুনের দিন, অর্থাৎ ৪ জুন বুধবার অফিস থেকে পাম্পিকে সঙ্গে নিয়েই বের হয়েছিলেন প্রেমিক দেব সিং। রাতেই কুলটি থানার সীতারামপুর-এথোড়া রাস্তা উপর নলিকাটা দেহ উদ্ধার হয় দেবের। ঘটনায় পাম্পির দিকে আঙুল তোলে যুবকের পরিবার। কিন্তু পুলিসের কাছে প্রথমে সে দেবের সঙ্গে প্রেমের কথা অস্বীকার করে সে। অথচ, তাঁদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজের জন্য কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছিল। পুলিস জানিয়েছে, নিজেদের সম্পর্কের বিষয়টি এড়িয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও করে ২৩ বছরের তরুণী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তদন্তকারীদের ম্যারাথন জেরায় এঁটে উঠতে পারেনি সে।
পুলিসকে পাম্পি প্রথমে জানিয়েছিল, খুনের ঘটনা দিন দেব তাকে বাইকে করে বাড়ি ছাড়তে আসেননি। পুলিস অবশ্য অন্যদের জেরা করে ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হয়েছে অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও পাম্মির সঙ্গেই দেব এসেছিল নিয়ামতপুরে। পুলিসের কাছে পাম্পি জানিয়েছিল, অন্য অফিস কর্মীর মতো তিনিও দেবের সহকর্মী। কোনও প্রেমিকা নয়। অথচ, পুলিস তদন্ত করে জানতে পারে, গত মাসেই তাঁদের রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ হয়ে যাওয়া পাকা হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সংস্থার মালকিন মারা যাওয়ায় রেজিস্ট্রি বিয়ে পিছিয়ে যায়। খুনের পর পাম্পিই প্রথম অফিসের সহকর্মী ও মৃতের পরিবারকে খবরটা দিয়েছিল। পুলিসের কাছে সেটাও চেপে গিয়েছিল। বার বার জেরার ফলে বিপরীত বয়ানও দিতে শুরু করেছিল সে। তাদের পাম্পির প্রতি সন্দেহ আরও গাঢ় হয় তদন্তকারীদের।
যদিও পুলিসের কাছে এখনও স্পষ্ট নয় পাম্পি নিজে বাইকের পিছনে বসে প্রেমিককে খুন করেছিল না অন্য কাউকে দিয়ে করিয়েছিল। পুলিসের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ক্ষতস্থানের দাগ দেখে স্পষ্ট পেশাদার খুনি এই খুন করেনি। মৃতের গলায় ডিপ ইনজুরি ছিল না। ব্লেড জাতীয় কোনও ক্ষুদ্র অস্ত্র দিয়ে বাইকের পিছনে বসেই নলি কাটা হয়েছে।