বাইশ বছর পর বাড়িতে হারিয়ে যাওয়া ছেলে, বাবা-মাকে চেনাল হাতের উল্কি
বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: ২২বছর আগে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক চিড়িতন মণ্ডল। আর ঘরে ফেরেননি। বহু খোঁজাখুঁজি করেও কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের ওই যুবকের সন্ধান পাননি তাঁর বাবা ও মা। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশাও তাঁরা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বুধবার কলকাতায় এক মানসিক হাসপাতাল থেকে হারিয়ে যাওয়া চিড়িতনকে খুঁজে পেল তাঁর পরিবার। হাতের ট্যাটু দেখে তাঁকে চিনে ফেলেন বাবা। ছেলে বাড়ি ফিরতেই মণ্ডল পরিবারে খুশির জোয়ার। বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই যুবককে দেখতে বাড়িতে যান বিডিও, পুলিস অফিসাররা।
কাটোয়া-২ বিডিও আসিফ আনসারি বলেন, বাইশ বছর পর পুলিস-প্রশাসনের উদ্যোগে চিড়িতন বাড়ি ফিরলেন। আমরা ওই পরিবারকে সবরকম সাহায্যে করব। অগ্রদ্বীপের গোঁসাইপাড়া এলাকার পুলিস মণ্ডল ও গোলাপী মণ্ডলের মেজ ছেলে চিড়িতন আগে রাজস্থানের জয়পুরে সোনা-রুপোর কাজ করতেন। ২০০০সালে বন্যার পর তিনি অগ্রদ্বীপে বাড়ি ফেরেন। তারপর ২০০৪সালে একদিন তিনি বাড়ি থেকে সাইকেলে করে বেরিয়ে যান। আর ফেরেননি। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা থেকে তাঁর ছবি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সাঁটানো হয়। তাতেও কোনও লাভ হয়নি। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশাও ছেড়েছিলেন পুলিসবাবু।
দিন পনেরো আগে কলকাতার ওই হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফোন আসে। তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলে সেখানেই ভর্তি আছে বলে জানানো হয়। প্রথমে তা যেন বিশ্বাসই হয়নি। পরে বাবা, মা সহ পরিবারের পাঁচজন কলকাতায় যান। বাইশটা বছর পার হয়ে গিয়েছে। মুখের আদল বদলে গিয়েছে। প্রতিবেশী কাকাকে দেখেই চিড়িতন হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেন। প্রতিবেশী ওই কাকা তাঁর ডানহাতে আঁকা ট্যাটু লাভ চিহ্ন দেখে চিনতে পারেন। তিনিই চিড়িতনকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে গ্রামের মেলায় একসঙ্গে একই ট্যাটু আঁকিয়েছিলেন। তারপরই বাবা-মা সহ সকলে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
বাবা পুলিসবাবু বলেন, ঈশ্বর সহায় হলে ছেলেকে ফিরে পাব, এই আশা মনের মধ্যে ছিল। শেষপর্যন্ত তা পূরণ হল। মা গোলাপীদেবী বলেন, ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। চিড়িতনরা চার ভাই ও দুই বোন। বোনেরাও এদিন দাদাকে দেখতে এসেছেন। হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। আর এখন ৪১ বছরের যুবক। চুলে পাক ধরেছে। মুখে দাড়ি। বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীদের ভিড়। সে যেন এক উৎসব। মা ও বাবাকে ফিরে পেয়ে চিড়িতনের দু’চোখে আনন্দাশ্রু।-নিজস্ব চিত্র