ডোনেশন দিয়ে বাড়িতে বসে মাইনে কীভাবে, রিপোর্ট তলব জেলা পরিদর্শকের
বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা, কাঁথি: নাচিন্দা জীবনকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ডামি শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস করানোর ঘটনায় তোলপাড় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) দপ্তর। বৃহস্পতিবারই ওই ঘটনায় কাঁথির অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পলাশ রায়। ‘বর্তমান’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের কপি পাঠিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওই স্কুল ভিজিট করে রিপোর্ট দিতে হবে। গোটা বিষয়টি বিকাশ ভবনে পাঠানো হবে বলে পলাশবাবু জানান।
উল্লেখ্য, নাচিন্দা জীবনকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষিকা মৌমিতা মাইতি জানা দীর্ঘদিন স্কুলে যান না। ক্লাসও করান না। তাঁর বাড়ি ভূপতিনগর থানার মুগবেড়িয়ায়। তাঁর স্বামী রবীন্দ্রনাথ জানা ভগবানপুর-২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) পদে কর্মরত। স্ত্রী স্কুলে না যাওয়ায় স্কুলের সঙ্গে এক অদ্ভুত চুক্তি করেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি প্রতি মাসে স্কুলের ফান্ডে ৪০ হাজার টাকা জমা করেন। সেই টাকা দিয়ে পাঁচজন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক রেখেছে স্কুল। তাঁদের প্রত্যেককে মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা সাম্মানিক দেওয়া হয়। এভাবেই একজন শিক্ষিকার অনুপস্থিতিতে পাঁচজন ডামি শিক্ষক রেখে স্কুল চলছে। ওই শিক্ষিকারও মাইনে পেতে কোনও সমস্যা হয় না। স্কুল পরিচালন কমিটি গোটা বিষয়টি মেনে নিয়েছে।
প্রতি মাসে স্কুলে মোটা টাকা ডোনেশন দিয়ে দিনের পর দিন স্কুলে না যাওয়া নিয়ম বিরুদ্ধ। সেই বেআইনি কাজকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে স্কুল পরিচালন কমিটি এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় হইচই পড়ে গিয়েছে। স্কুলের অন্দরেও এনিয়ে ঝামেলা তুঙ্গে। জানা গিয়েছে, পরিচালন কমিটির একাংশ শুরুতেই এই বেনিয়মের সঙ্গে আপোস না করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু, পরিচালন কমিটির সভাপতি সহ অপর অংশ তাতে আমল দেননি। যে কারণে বহু দিন ধরে মাসিক ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ইংরেজির শিক্ষিকাকে নিয়ম ভেঙে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে চণ্ডীপুর ব্লকের ভগবানপুর প্রাইমারি স্কুলেও একইভাবে ডামি শিক্ষিকা রাখার ঘটনা সামনে এসেছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য ওই স্কুলের সহ শিক্ষক। তিনি নিজে স্কুলে না গিয়ে তাঁর ভাইয়ের স্ত্রীকে দিয়ে ক্লাস করাতেন। সংবাদ মাধ্যমে ওই ঘটনা সামনে আসার পর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) জেলা পরিষদ সদস্যকে শোকজ করেন। ওই ডামি শিক্ষিকাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়।
ভগবানপুর-২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ জানা বলেন, তাঁর স্ত্রী মানসিক রোগে ভুগছেন। কাঁথির এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা চলছে। তাই তাঁর পক্ষে স্কুলে যাওয়া এবং ক্লাস করানো সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালন কমিটির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা দিই। পঠনপাঠনে যাতে ব্যাঘাত না হয়, সেজন্য চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক রাখতে বলেছি। আরও শিক্ষক লাগলে স্কুলকে সহযোগিতা করব বলেছি।