• হাতির পাল লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু আগুনের গোলা, দগ্ধ শাবককে সঙ্গে নিয়ে দৌড় হস্তিনীর, ঝাড়গ্রামের ঘটনায় নিন্দার ঝড়
    বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: অমানবিক, নির্মম! বলছেন জেলাবাসী। সমাজ মাধ্যমে উঠেছে নিন্দার ঝড়। বুধবার রাতে যেভাবে হাতির পাল তাড়ানোর নামে আগুনের গোলা ছুড়ে বন্যপ্রাণীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ জেলার মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে খড়্গপুর বন বিভাগের কলাইকুন্ডা রেঞ্জের সাঁকরাইল বিটের হাড়িভাঙ্গা গ্ৰামে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সমাজ মাধ্যমে (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি বর্তমান)। দেখা যাচ্ছে, প্রাণভয়ে ছুটছে হাতির পাল। শোনা যাচ্ছে উন্মত্ত চিৎকার, পিছন থেকে মুহুর্মুহু ছোড়া হচ্ছে জ্বলন্ত আগুনের গোলা। হস্তিনী মা ঝলসানো শাবককে নিয়ে প্রাণভয়ে দৌড়চ্ছে। ঝাড়গ্রাম শহরে জ্বলন্ত শলাকায় বিদ্ধ হয়ে একটি মা হাতির মর্মান্তিক মৃত্যুর স্মৃতি এখনও তাজা। সেই আবহেই ফের নতুন বিতর্ক। বনবিভাগ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। 

    খড়্গপুর বনবিভাগের ডিএফও মনীশ যাদব বলেন, বারডাঙ্গা বিট থেকে চাঁদাবিলা পর্যন্ত হাতির ড্রাইভ করা হয়েছে। বনবিভাগের কর্মীরা ছিলেন। হুলা পার্টি ছিল না। হাতির পালকে লক্ষ্য করে আগুনের গোলা ছোড়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। ঝাড়গ্রাম শহরে হাতির পিঠে জ্বলন্ত শলাকা বিঁধে দেওয়ার অভিযোগে হুলা পার্টির তিনজন গ্ৰেপ্তার হয়েছিল। রাজ্যজুড়ে সে ঘটনা তোলপাড় ফেলে দেয়। হাড়িভাঙ্গার ঘটনায় নতুন করে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। হাতির পালের দলমা পাহাড়ে ফেরার পথ অনেকদিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জেলার বনাঞ্চলজুড়ে হাতির পাল খাবার সন্ধানে দিশাহীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বছর জমি থেকে বেশির ভাগ ফসল উঠে গিয়েছে। ফলের বাগানগুলোতে কড়া পাহারার জেরে ঢুকতে পারছে না। মরিয়া হাতির দল গ্ৰামে ঢুকে বাড়িঘর, আইসডিএস কেন্দ্র, মুদিখানার দোকানে খাবারের খোঁজ চালাচ্ছে। বনবিভাগের কর্মীরা হাতি ড্রাইভ কর্মসূচির মাধ্যমে হাতির পালকে চক্রাকারে নানা রেঞ্জে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বুধবার রাতে বারডাঙ্গা বিট থেকেও একইভাবে হাতি ড্রাইভ শুরু হয়েছিল। বনবিভাগের কর্মীরা দলটিকে চাঁদাবিলা রেঞ্জের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই সময়েই ঘটনাটি ঘটে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাতির পালের দিকে লাগাতার আগুনের গোলা ছোঁড়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে উন্মত্ত চিৎকার। আগুনের গোলার আঘাতে হাতির পাল প্রাণভয়ে পালাচ্ছে। শরীরের পিছন অংশ পুড়ে যাওয়া শাবককে নিয়ে হস্তি মায়ের পালোনোর ছবিও ধরা পড়েছে। হাতির দলটির দিকে আগুনের গোলা ছোঁড়ার ছবি ছড়িয়ে পড়তেই জেলার সকলস্তরের মানুষ নিন্দায় সরব হয়েছেন। 

    নির্মম ঘটনার পিছনে কারা, তার সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। বারডাঙ্গা বিট এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, হাতির দলে শাবক সহ কুড়ি থেকে বাইশটি হাতি ছিল। বারডাঙ্গা বিট থেকে হাতির দলটিকে নিয়ে আসা হচ্ছিল। হাড়িভাঙ্গা এলাকায় জঙ্গল কিছুটা কম। হাতির দলটি অন্ধকারের মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। সেই সময়ে হুলা পার্টির ছেলেরা হাতিগুলোকে লক্ষ্য করে একের পর এক আগুনের গোলা ছুড়তে শুরু করে। জ্বলন্ত শিখা হাতির গায়ে ঝড়ে পড়ছিল। হাতিগুলো দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে চারিদিকে ছোটোছুটি করছিল। অনেকের হাতেই তখন শলাকা ছিল। 

    কলাইকুন্ডা রেঞ্জের এক বনকর্তা বলেন, গতকাল হাতির দলটিকে চাঁদাবিলার দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে। আগুনের গোলা ছোঁড়া হচ্ছিল। এই কাজ কারা করেছে তা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের প্রাক্তন কর্তা সমীর মজুমদার বলেন, ঝাড়গ্রামে একাধিক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। হাতির সঙ্গে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা আগুনের গোলা ছুঁড়েছে তাঁরা একবারও খেয়াল করেনি দলে শাবক আছে। এই ঘটনার নিন্দার ভাষা নেই। 

     আগুনের গোলার ভিতর দিয়ে প্রাণপণে দৌড়চ্ছে হাতি। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)