নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া ও সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: অবৈধভাবে কয়লা পাচারের অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে। রঘুনাথপুর থানার চেলিয়ামার গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ। দমোদরের ওপারেই রয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। ঝাড়খণ্ডের চাষনালা, সিন্দরি এলাকায় এখনও সক্রিয় একাধিক কয়লা খনি। অভিযোগ, সেই সব এলাকা থেকে চোরা পথে কয়লা নৌকায় চাপিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে চেলিয়ামার করগালি নদীঘাটে। তারপর সেই কয়লা লোড হচ্ছে স্কুটারে। এক একটি স্কুটারে অন্তত চার কুইন্টাল কয়লা থাকছে বলে খবর। স্কুটার চালকরা সেই কয়লা পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন কুক কারখানা থেকে শুরু করে ইটভাটায়। বিরোধীদের প্রশ্ন, ফের কি জেলায় সক্রিয় হয়ে উঠছে কয়লা পাচার চক্র? পূর্বের মত কি সাম্রাজ্য তৈরির চেষ্টা হচ্ছে? এভাবেই কি শুরু হচ্ছে ‘ট্রায়াল রান’?
সম্প্রতি গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযানে নামে রঘুনাথপুর থানার পুলিস। স্কুটারে করে কয়লা পাচারে সময় পুলিসের তাড়া খেয়ে সবকিছু ফেলে পালায় পাচারকারীরা। পরে পুলিস সেগুলিকে উদ্ধার করে চেলিয়ামা পুলিস ক্যাম্পের বাইরে মজুত করে। অন্তত পাঁচ-ছ’টি স্কুটার পুলিস উদ্ধার করে। পুলিসের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ঝাড়খণ্ড থেকে নদীপথে কয়লা নিয়ে আসা হয়েছিল। তারপর সেই কয়লার বস্তা স্কুটারে করে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। সূত্র মারফত খবর পেয়ে আমরা স্কুটারগুলিকে ধাওয়া করি। পাচারকারীরা স্কুটার ফেলে পালায়। তবে, এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
তাহলে কি ফের সক্রিয় হচ্ছে কয়লা পাচার চক্র? এই প্রশ্নের উত্তরে ওই আধিকারিকের জবাব, মাসখানেক আগে একইভাবে কয়লা পাচারের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, আমরা রুখে দিয়েছিলাম। পুলিস সক্রিয় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়া জেলায় এক সময় মারাত্মকভাবে সক্রিয় ছিল কয়লা পাচার চক্র। কয়লা পাচার চক্রের ‘কিংপিং’ বলে অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা এই জেলারই নিতুড়িয়া থানার ভামুরিয়ার বাসিন্দা। পুরুলিয়া, আসানসোল, দুর্গাপুর থেকে শুরু করে রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল লালা। এনিয়ে বিস্তর অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি ও সিবিআই। লালা ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে ইডি। এই মামলায় পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতাকে নোটিস পাঠায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের তৎকালীন এক পদাধিকারীকেও এনিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কয়লা পাচার নির্বিঘ্নে চালাতে প্রতি মাসে নিয়ম করে বিভিন্ন পুলিসকর্তা থেকে শুরু করে অফিসারের কাছে ‘ভেট’ পৌঁছে দিত পাচারকারীরা। তবে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তত্পর হওয়ার পর গত কয়েক বছর ধরে কয়লা পাচার বন্ধই ছিল জেলায়। ফের কি সক্রিয় হয়ে উঠছে চক্রের কারবারিরা? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। এনিয়ে রঘুনাথপুরের বিজেপি বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি বলেন, আমিও জানতে পেরেছি যে করগালি ঘাট থেকে অবৈধভাবে নৌকা বোঝাই করে কয়লা পাচার চলছে। পুলিস প্রশাসনের একাংশের মদতেই এই কারবার চলছে। তবে, মাফিয়াদের এই দৌরাত্ম্য চলতে পারে না। বিষয়টি সিবিআইয়ের নজরে আনব।