১০ সেকেন্ডে তালা ভাঙার অনলাইন কোচিং! দুষ্কৃতীদের ভিডিও লালবাজারের হাতে
বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: কেস-১: বছরখানেক আগে গরফায় বাড়ির তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বলছে, গোটা অপারেশনের টাইম ২০ মিনিট। দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। জেরায় ধৃতদের স্বীকারোক্তি সদর দরজার তালা ভাঙতে সময় লেগেছে ১০-১২ সেকেন্ড।
কেস-২: বেহালা রায় বাহাদুর রোডেও গতবার পুজোর সময় দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা। বাড়ির পিছনে রান্নাঘরের গ্রিলে লাগানো তালা ভাঙে দুষ্কৃতীরা। সেখানে গ্রেপ্তারির পর ধৃতরা জানায়, ১৫ সেকেন্ডের কম সময়ে ভেঙে ফেলা হয়েছিল তালাটি।
এত কম সময়ে দামি দামি তালা ভাঙা সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? অনুসন্ধান শুরু করে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। গোপন সূত্রে চাঞ্চল্যকর এক ভিডিও ক্লিপিংস পান গোয়েন্দারা। চক্ষু চড়ক গাছ তাঁদের! সেখানে দেখা যায়, গত ৫ বছরে তৈরি হওয়া যে কোনও ধরনের অত্যাধুনিক তালা কীভাবে মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ভাঙা যায়, তার অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। তা ছড়িয়ে পড়ছে ‘শিক্ষানবীশ’ চোরেদের মোবাইলে। বাড়িতে বসেই সেই ভিডিওর মাধ্যমে তালা ভাঙার কৌশল শিখে নিচ্ছে তারা। কিন্তু, এই ভিডিও তৈরি হল কোথায়? কার মাধ্যমে শহরে এই ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে? দুষ্কৃতীদের কি কোনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে? সেখানেই কি দেদার চলছে অনলাইন কোচিং? লালবাজারের হাতে আসা ভিডিওর ভিত্তিতে গোটা ঘটনাটির তদন্ত চালাচ্ছে বার্গলারি দমন শাখার অফিসাররা।
পুলিস সূত্রে খবর, সম্প্রতি শহরে বাড়ির সদর দরজা ভেঙে দুঃসাহসিক একটি চুরির ঘটনার তদন্তে নামে গোয়েন্দা বিভাগ। তাতে দু’জনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিস। ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, তা জানতে ধৃতের মোবাইল ফোন ঘাঁটেন তদন্তকারীরা। উদ্ধার হয় একটি ভিডিও। সূত্রের খবর, তাতে ‘শিক্ষাগুরু’র মুখ দেখা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র হাতের কারসাজিতে গোটা বিষয়টি শেখানো হচ্ছে। কী দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে? ‘শিক্ষাগুরু’র কাছে রয়েছে একাধিক তালা। বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন কোম্পানির। সে হাতে ধরে রয়েছে, লোহার ছেনির মতো দেখতে একটি দণ্ড। যার মাথা ঈষৎ বাঁকা। তালার উপরের ফাঁকা অংশের ভিতরে সেই লোহার দণ্ড ঢুকিয়ে জোড়ে চাপ দিতেই ভেঙে যাচ্ছে। তিনদফায় চাপ দিতে হবে। সময় লাগছে মাত্র ১০ সেকেন্ড।
পুলিস সূত্রে খবর, বাড়ির সদর দরজায় সাধারণত তুলনামূলকভাবে বেশি পোক্ত তালা ব্যবহার করেন সাধারণ মানুষ। তাতে ৭, ৮ কিংবা ৯ লিভার থাকে। ‘শিক্ষাগুরু’ অনলাইন কোচিং ক্লাসে দেখাচ্ছে, এই তিন ধরনের তালা ভাঙার জন্য তিন দফায় লোহার দণ্ডে চাপ দিলেই, ১০ সেকেন্ডের মধ্যে কেল্লা ফতে। শুধু তাই নয়, কোন ধরনের তালা ভাঙা সম্ভব নয়, তাও শেখানো হয়েছে ভার্চুয়াল কোচিংয়ে। একটি বিশেষ কোম্পানির তালা ভাঙা যাচ্ছে না। কারণ তাতে তালার উপরের অংশে ফাঁক নেই। ফলে লোহার দণ্ড ঢুকছে না। এমন তালা দেখলে, তা ভাঙার চেষ্টা না করার উপদেশও দিয়েছে ওই ‘শিক্ষাগুরু’।