• মহেশতলা কাণ্ডে ৭টি মামলায় গ্রেপ্তার মোট ৪০, দোকান নিয়ে গণ্ডগোলের নেপথ্যে কি বিজেপির উস্কানি? তদন্তে পুলিস
    বর্তমান | ১৩ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা ও সংবাদদাতা, বজবজ: নিছক ফলের দোকান বসানো নিয়ে বচসা থেকেই কি রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল মহেশতলা? নাকি এর পিছনে ছিল কোনও উস্কানি? পুলিসি তদন্তে উস্কানির ইঙ্গিতই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বুধবার দুপুরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ ও পুলিসকে আক্রমণের ঘটনার পরই ওই রাতেই ৩৫ কেজি বিস্ফোরক সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে বজবজ থানার পুলিস। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে বিজেপির সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত নবীনচন্দ্র রায়। বাকিরাও বিজেপির সমর্থক বলে সূত্রের খবর। যদিও তাঁরা বিজেপির কর্মী বা সমর্থক নন বলে দাবি করেছে দল। তাহলে মহেশতলা, রাজাবাগান, নাদিয়াল এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও তাণ্ডবের পিছনে কি গেরুয়া শিবিরের উস্কানি রয়েছে, এই প্রশ্নই এখন উঠে এসেছে রাজনীতির চর্চায়। যৌথভাবে গোটা ঘটনার তদন্ত করছে ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলা ও কলকাতা পুলিস। এদিকে, মহেশতলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের পুলিস অপারগ, এই দাবি তুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানিয়ে এদিন জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।

    বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলার অতিরিক্ত সুপার মিতুনকুমার দে। তিনি বলেন, ধৃতদের কাছ থেকে মিলেছে ৩৫ কেজি বোমা তৈরির মশলা। জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, মহেশতলা ঘটনার আবহে তারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জোগাড় করেছিল। গোটা বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা’ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিস ও লালবাজার সূত্রে খবর, গোলমাল পাকানোর ঘটনায় ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলা ২৮ জনকে এবং কলকাতা পুলিস ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সব মিলিয়ে সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রসঙ্গত, মহেশতলার ঘটনায় যারা উস্কানি দিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিস। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তাদের গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিস কর্তারা। উল্লেখ্য, ধৃত বিজেপি কর্মী নবীনচন্দ্রকে গত এপ্রিল মাসে রামনবমীর দিন মহেশতলার বাটানগরে পুলিসের ব্যারিকেড ভাঙতে দেখা গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে বিজেপির ডায়মন্ডহারবার সংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সুফল ঘাঁটু বলেছেন, ‘নবীনচন্দ্র দলের কেউ নন’। তবে থানার উল্টোদিকে এত বড় ঘটনা ঘটে গেলেও কেন পুলিস তা আগাম আঁচ করতে পারল না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কি কোথাও পুলিসের গাফিলতি রয়েছে? গোয়েন্দা বিভাগ কি ব্যর্থ? এলাকার মানুষও এই ঘটনার জন্য পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা বলেন, গোলমালের আগে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেওয়া যেত। আসলে থানা বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি। তার জন্যই এত বড় কাণ্ড ঘটে গেল। তবে পুলিসের গাফিলতির কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও এদিন সাংবাদিক বৈঠকে অতিরিক্ত সুপার জানান, যদি কারও খামতি বা গাফিলতি থাকে, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    এদিকে, এই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সারাদিন থমথমে ছিল রবীন্দ্রনগর থানার অন্তর্গত আক্রা ফটক রোড, সন্তোষপুর স্টেশন ও পাঁচুর এলাকা, রাজাবাগান এবং নাদিয়াল থানা এলাকা। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, ব্যাঙ্ক— সবই ছিল বন্ধ। এলাকায় মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিস বাহিনী। রবীন্দ্রনগর থানার ওই এলাকা কার্যত বন্‌঩ধের চেহারা নেয়। হাতেগোনা কয়েকজন বাসিন্দা ছাড়া কেউই ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হননি। তাঁদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)