ছাদের একটু উপর দিয়েই একের পর এক বিমান উড়ে যায় একেবারে কাছ দিয়ে। প্রায়ই গভীর কিংবা পাতলা ঘুম ভেঙে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে বিকট আওয়াজে।
নিবাস ওঁদের মাইকেলনগর, মধ্যমগ্রাম, বিরাটি, গঙ্গানগর, নিউ ব্যারাকপুর, কৈখালি, চিনার পার্ক, রাজারহাট এলাকায়। কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিটি উড়ানের টেক-অফ আর ল্যান্ডিং হয় ওঁদেরই মাথার উপর দিয়ে।
কখনও প্রাণভয় গ্রাস করেনি ওঁদের। কিন্তু বৃহস্পতিবার আমেদাবাদের মেঘানিনগরে যা ঘটলো, তাতে এই সব অঞ্চলের অনেকেই এখন আতঙ্কিত।
এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার এ দিন মেঘানিনগরে বিজে মেডিক্যাল কলেজের ইউজি হস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে পাইলট-ক্রু-বিমাযাত্রী-সহ ২৪২ জনের শুধু প্রাণ কাড়েনি, জান নিয়েছে ওই বহুতলে থাকা ডাক্তারি পড়ুয়া-সহ বেশ কয়েক জনের। কলকাতা বিমানবন্দরের রানওয়ের দু’ দিকে থাকা মানুষজন কেঁপে উঠেছেন টিভিতে ওই দৃশ্য দেখে।
আমেদাবাদ বিমানবন্দরে দৈনিক ২৮৮টি উড়ান ওঠা-নামা করে। সেখানে কলকাতা বিমানবন্দরে রোজ ওঠে-নামে প্রায় ৩৫০ বিমান। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কলকাতা বিমানবন্দরে মূল রানওয়ের উত্তরে রয়েছে মাইকেলনগর, নিউ ব্যারাকপুর, বিরাটি, গঙ্গানগর, মধ্যমগ্রাম।
আর দক্ষিণ দিকের উড়ানগুলি কৈখালি, চিনার পার্ক, রাজারহাট, নিউটাউনের উপর দিয়ে ওঠা-নামা করে। যখন হাওয়ার গতি যে দিকে বয় বেশি, সেই দিকের অভিমুখে টেক-অফ এবং উল্টো অভিমুখে ল্যান্ডিং করে উড়ানগুলি। ফলে সারা দিনে গড়ে দু’দিকেই গড়ে ১৫০-র বেশি বিমান ওঠা-নামা করে।
এ দিন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান আছড়ে পড়ার ভিডিয়ো দেখে মাইকেলনগরের শচিন মিস্ত্রি বলেন, ‘আগে কখনও মনে হয়নি। কিন্তু আজকে (বৃহস্পতিবার) আমেদাবাদের মেঘানিনগরে যা ঘটলো, সেই একই পরিণতি তো আমাদের সঙ্গেও যে কোনও দিন হতে পারে!’
নিউ ব্যারাকপুরের মিনতি পালের কথায়, বলেন, ‘আমাদের সকলেরই তো মাথার উপর দিয়ে যায় দৈত্যাকার বিমানগুলি! যদি কখনও ভেঙে পড়ে কোনও একটা!’
বিরাটির সোহম হালদার কিংবা নিউ ব্যারাকপুরের অভীক দে অবশ্য বলেন, ‘দুর্ঘটনা, অঘটন, এমনকী মৃত্যুও যে কোনও সময়ে যে কোনও জায়গায় যে কোনও পরিস্থিতিতে হতে পারে। রাস্তায় লোকে গাড়ি চাপা পড়ে বলে কি রাস্তায় যাব না! নাকি আমেদাবাদে বিমান ভেঙে পড়েছে বলে আর কখনও প্লেনে চড়বো না! জীবন নিজস্ব গতিতে চলে। এগুলো নিছকই তো দুর্ঘটনা।’