দোতলা বাড়ি মানেই বিপদ! শুরু করলেই হয় দুর্ঘটনা, বাংলার এই গ্রামে নেই একটিও দোতলা বাড়ি, নেপথ্যে অদ্ভূত কারণ...
আজকাল | ১৪ জুন ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের বালিয়াড়া গ্রাম যেন এক অদৃশ্য বেড়াজালে আটকে আছে। আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে যেখানে বহুতল বাড়ি হওয়াটা স্বাভাবিক, সেখানে আজও এই গ্রামে নেই একটিও দোতলা বাড়ি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মনসার কৃপা রয়েছে এই গ্রামে। আর তাঁর আদেশ অমান্য করে কেউ দোতলা বাড়ি তুললে ঘটতে পারে অমঙ্গল।
গ্রামবাসীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বহু বছর আগে গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক সত্যনারায়ণ পাল সাহস করে দোতলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু কাজ চলাকালীন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হন এবং পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই গ্রামবাসীদের মধ্যে আরও দৃঢ় হয়েছে এই বিশ্বাস—মনসার নির্দেশ উপেক্ষা করলে তার ফল ভয়াবহ হতে পারে।
ফলে আজও কেউ দোতলা বাড়ি করার সাহস দেখান না। কেউ কেউ একতলা বাড়িকে দোতলার উচ্চতায় তুললেও ছাদ ঢালার আগে থেমে যান। বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে হলেও এই গ্রাম আজও কুসংস্কারের ছায়ায় ঢাকা। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষ শহরে গিয়ে দোতলা বাড়ি তৈরি করছেন। কিন্তু গ্রামের মাটিতে নয়।
প্রতি বছর ৭ আশ্বিন মনসার বিশেষ পূজা হয় এই গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘আমাদের শক্তি থাকলেও দেবীর আদেশ অমান্য করতে ভয় পাই। সম্প্রতি এক ব্যক্তি দোতলা করার পরিকল্পনা করায় তাঁর পা ভেঙে যায়।’ এই ঘটনার পর আরও বাড়ে ভীতি। তবে এই বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলেই মনে করেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক জয়দেব চন্দ। তাঁর মতে, একটি বা দুটি দুর্ঘটনার সঙ্গে বাড়ি নির্মাণের সম্পর্ক টেনে এমন ধারণা তৈরি করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তিনি বলেন, ‘এই সংস্কার ভাঙতে হলে সময় লাগবে, সাহস দেখাতে হবে স্থানীয়দের।’
ওন্দার বিডিও মহম্মদ মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, 'বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের তরফে সরাসরি হস্তক্ষেপ না এলে এবং গ্রামের মানুষ নিজেরাই অন্ধ বিশ্বাস ভাঙার উদ্যোগ না নিলে এই সংস্কার হয়তো ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।' স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, আধুনিক শিক্ষার আলো কি পারবে এই অন্ধকার দূর করতে?