অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: ছেলের পছন্দ, কিন্তু তাঁর নয়। ছেলে আরিয়ানের সঙ্গে সোদপুরের নির্যাতিতা তরুণীর বিয়ের কথাবার্তায় খুব একটা সায় ছিল না শ্বেতা খান ওরফে ফুলটুসির। তা সত্ত্বেও আরিয়ানের হবু স্ত্রী হিসেবে ওই তরুণী তাদের বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে কয়েক মাস ধরে থাকতে শুরু করে। কিছুদিন বাদেই তাঁর সঙ্গে ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা। তরুণীর বিবাহবিচ্ছেদ মামলা চলায় তাতে দেরি হচ্ছিল। সবমিলিয়ে এসব শ্বেতার পছন্দ ছিল না। আর সেই ক্ষোভ থেকেই তরুণীর উপর অত্যাচার, চলত মারধর। পুলিশের জেরায় এমটাই জানিয়েছে মহসিনা বেগম ওরফে শ্বেতা খান ওরফে ফুলটুসি।
একসঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকা হবু বউমাকে কেন মারধর করত? শুক্রবার তদন্তকারীদের এই প্রশ্নের উত্তরে ফুলটুসি জানায়, আরিয়ান ওই তরুণীকে পছন্দ করে ভালোবাসলেও সে একদমই তাকে পছন্দ করতে না। আর তাই তাকে কাজ করতে না পারার নানা অজুহাত দেখিয়ে কথায় কথায় মারধর করত। প্রসঙ্গত, বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে আরিয়ানদের ঘরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, জামাকাপড় গুছিয়ে রাখার মতো ঘরের কাজ ঠিকমতো করতে না পারার জন্য ফুলটুসি তার ছেলের হবু বউমাকে বেধড়ক মারছে। আর তাতে কোনওরকম বাধাও দিচ্ছে না আরিয়ান। ফ্ল্যাটের ঘরের এই সিসিটিভি ফুটেজ কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে এসেছে।
এদিকে আরিয়ানকে যে সোদপুরের ওই তরুণী ভালোবাসে, সেকথা পুলিশকে ওই তরুণী জিজ্ঞাসাবাদে আগেই জানিয়েছিলেন। এমনকী তাঁর এমনও দাবি, আরিয়ানের কোনও দোষ নেই, সে কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। আরিয়ানকে ভালোবেসে তিনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, তা স্বীকার করে নিয়েছে আরিয়ানের মা ফুলটুসিও। অন্যদিকে এই ফুলটুসি ওরফে শ্বেতা সেক্স র?্যাকেট চালায় কি না, সে ব্যাপারে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও অনেক তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ফুলটুসির ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তদন্তকারীদের।
অপরদিকে জেরার মুখে ফুলটুসি বারবারই পুলিশকে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া নাবালিকা ও উদ্ধার হওয়া ৩ বছরের শিশুকন্যাটি তার। প্রসঙ্গত, এই বিষয়টি পুলিশকে বহুবারই ভাবিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া নাবালিকা ও তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া তিন বছরের শিশু কন্যা আদতে কার সন্তান? এনিয়ে ধন্দে ছিল পুলিশ। ফুলটুসি জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া নাবালিকা তার মেয়ে ও তিন বছরের শিশুকন্যাটিও তার।
এই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানালেন, ‘‘সোদপুরের ওই তরুণী তাঁকে জোর করে আটকে রেখে মারধর, শ্লীলতাহানি ও তাঁকে জোর করে বার ড্যান্সার করার অভিযোগ করেছেন পুলিশের কাছে। পুলিশ ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতেই আপাতত তদন্ত করছে। মধুচক্র বা নারী পাচারের সঙ্গে ফুলটুসি জড়িত কি না, সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও তদন্ত শুরু করেনি পুলিশ। প্রয়োজনে এই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখবেন হাওড়া সিটি পুলিশের ডোমজুড় থানার তদন্তকারীরা।’’