হাওড়ার সিভিক ভলান্টিয়ারকে কান ধরে ওঠবোস করানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ বার ক্লোজ করা হলো উদয়নারায়ণপুরের পেঁড়ো থানার ওসিকে। ওসি তন্ময় কর্মকারকে ক্লোজ করা হয়েছে শনিবার। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, এত বড় ঘটনার খবর ওসির কাছে কি ছিল না? যদি না থাকে, কেন ছিল না? যদি থাকে, তা হলে তা কি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি কি জানিয়েছিলেন? যদি না জানান, কেন জানাননি?
মুখ্যমন্ত্রীর নামে গালিগালাজ করার অভিযোগে পেঁড়ো থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে কোমরে দড়ি বেঁধে কান ধরে ওঠবোস করানোর অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, ১১ জুন এই ঘটনা ঘটে। ১৩ তারিখ, শুক্রবার সেই ঘটনার ভিডিয়ো সামনে আসে। যদিও ভিডিয়োর সত্যতা এইসময় অনলাইন যাচাই করেনি। তবে ওই ভিডিয়োয় সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া আর যাদের দেখে যাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে সূত্রের খবর।
ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই ছড়াতেই হইচই পড়ে যায়। ঘটনার সমালোচনা করে বিজেপি নেতাদের একের পর এক পোস্ট সামনে আসে। মুখর হন সাধারণ মানুষও। যদিও ভিডিয়ো দেখে শুক্রবারই রাজু গায়েন ও লালু মল্লিককে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, লালুর বাড়ি আলতাড়ায়, রাজু বসন্তপুরের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম শ্রীধর চক্রবর্তী। উদয়নারায়ণপুর বিধানসভার পেঁড়ো থানার বসন্তপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি। ঘটনাটিও বসন্তপুর এলাকারই। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে শোনা গিয়েছে, ‘কেন তুই দল নিয়ে খারাপ কথা বলেছিস? কে তোকে গালিগালাজ করতে বলেছে?’ সেই প্রশ্নে ওই সিভিকের মুখে শোনা যায় বিজেপি নেতা ‘লালুদা’র নাম।
এই লালুর পোশাকি নাম অভিজিৎ চক্রবর্তী। তিনি বিজেপির উদয়নারায়ণপুর ৫ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি। তাঁর দাবি, ‘আমি শুনেছি ওই সিভিক ভলান্টিয়ার মদ্যপ অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসকে গালিগালাজ করছিল। সেই সময় কয়েকজন ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে, আমার নাম বলিয়ে নেয়। যেন আমিই ওকে বলতে বলেছি। শুক্রবার আমি ভিডিয়োটির বিষয়ে জানতে পেরেছি। আমাকে হেনস্থা করতেই এই কাজ করানো হয়েছে।’
যদিও বসন্তপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হাসান সামিউল্লাহের বক্তব্য, এখানে রাজনীতি টেনে লাভ নেই। কারণ, এই ঘটনা যখন ঘটে, স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে কেউ ছিল না। পাল্টা তাঁর দাবি, ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। সে কারণেই কয়েকজন যুবক মারধর করেছে। হাসানের সংযোজন, ‘যদি ওই সিভিক ভলান্টিয়ার বিজেপি নেতার নাম বলে, তাহলে ওই বিজেপি নেতারও শাস্তি হওয়া উচিত।’
হাওড়ার গ্রামীণের পুলিশ সুপার সুবিমল পাল জানান, ভিডিয়ো সামনে আসতেই তদন্ত শুরু হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারকে হেনস্থার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় তাঁকেও কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।