অশীন বিশ্বাস, রহড়া
নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সাফল্য পেল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। রহড়া থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ল বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের জাল নথি তৈরি করে দেওয়ার চক্রের বড় মাথা। ধৃতের নাম অজয় কুমার দাস। তার বাড়ি উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে।
পরিবার নিয়ে মহেশতলার একটি আবাসনে বছর পাঁচেক ধরে ভাড়ায় থাকছিল অজয়। ধৃতের কাছ থেকে প্রচুর জাল আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পুলিশের সন্দেহ, গত কয়েক এই চক্রের হাত ধরে তৈরি হওয়া ভুয়ো নথির সংখ্যাটা কোটির কম নয়।
গত মঙ্গলবার মহেশতলা এলাকা থেকেই রহড়া থানার পুলিশ অজয়কে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতকে সাত দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে ভারতে আসা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থেকে শুরু করে জন্ম শংসাপত্র, এমনকী পাসপোর্ট পর্যন্ত জাল করে দিত অজয়। মহেশতলায় নিজের ফ্ল্যাটে বসেই এই জাল নথি তৈরির র্যাকেট পরিচালনা করত সে।
সূত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক ভুয়ো নথির জন্য ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নিত সে। কখনও সুযোগ বুঝে টাকার অঙ্ক পৌঁছে যেত ৫০ হাজারেও। সবই নির্ভর করত কোন নথির জন্য আবেদন করা হচ্ছে তার উপরে। এই চক্রে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মীরও সহায়তা ছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
সম্প্রতি রহড়া থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল তিন বাংলাদেশি। তাদের জেরা করেই মহম্মদ জিয়াউদ্দিন মণ্ডল নামে একজনের হদিশ পায় পুলিশ। গত ১০ জুন রাতে ইকো পার্ক এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জেরা করে পুলিশ অজয়ের খোঁজ পায়। জিয়াউদ্দিন এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। তার বিনিময়ে কমিশন পেত। এ রকম আরও বহু এজেন্ট অজয়ের হয়ে কাজ করত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইটের সাহায্য নিয়ে এই কারবার চলত। বাতিল এপিক নম্বর কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ছবি আর ভারতীয় ঠিকানা দিয়ে সহজেই জাল ভোটার কার্ড বানিয়ে দিত অজয় ও তার দলবল। এর পর ভুয়ো আধার কার্ড এবং প্যান কার্ডও তৈরি করে দিত। তার পরই তৈরি হয়ে যেত পাসপোর্ট। ভিসাও মিলত অবাধে।
এই র্যাকেটের মাধ্যমে কতজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে বৈধ নাগরিক রূপে পরিচয় দেওয়া হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। সূত্রের খবর, সংখ্যাটা কয়েক লক্ষ ছাপিয়ে যেতে পারে। অজয়ের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের ধারণা, এর সঙ্গে একটি বড় আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকতে পারে। ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মধ্য) ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, ‘চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত, কী ভাবে চলত এই চক্র, এখনও পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশিকে ভুয়ো নথি বানিয়ে দিয়ে এ দেশে থাকতে সাহায্য করেছিল তা অজয়কে জেরা করে জানার চেষ্টা হচ্ছে।’