অর্ণব আইচ: ঠিক যেন থ্রিলার ছবির চিত্রনাট্য। পুরনো আসবাব কেনার অছিলায় বাড়িতে ঢুকে বৃদ্ধা খুন। ছাতা মাথায় দিয়ে মুখ লুকিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েও হল না শেষরক্ষা। মুচিপাড়ায় বৃদ্ধা খুনের মাত্র ৩ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার আততায়ী। ‘গেট প্যাটার্ন’ পদ্ধতির মাধ্যমে অভিযুক্ত ফেরিওয়ালাকে পাকড়াও করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
ধৃত বছর তিপ্পান্নর ময়মুর আলি গাজি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের বাসিন্দা। ময়মুর পুরনো জিনিসপত্র কেনাকাটির ব্যবসা করত। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত বৃদ্ধা তাঁর বাড়িতে একাই থাকতেন। বেশ কয়েকদিন ধরে দামি পুরনো আসবাবপত্র বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। গত ১১ জুন সকাল ন’টা নাগাদ ময়মুর তাঁর বাড়িতে আসে। দরজা ধাক্কা দিয়ে বৃদ্ধাকে ডাকে। আসবাব কেনার অছিলায় বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। সেই সময় ময়মুরের গলায় ছিল একটি গামছা। দোতলায় যাওয়ার পথে ওই গামছা দিয়ে বৃদ্ধার গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করে ময়মুর। তাঁর কানের দুল, হার, আংটি এবং হাতের চুরি হাতিয়ে নেয়। আলমারিতে থাকা নগদ কিছু টাকাও লুট করে। বেরনোর সময় বৃদ্ধার বাড়ি থেকে একটি তালা, চাবি নিয়ে বেরয় সে। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ‘অপারেশন’ সেরে বাইরে থেকে তালা দিয়ে এলাকা ছাড়ে ময়মুর। যাতে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা না পড়ে তাই তার মাথায় ছিল ছাতা।
বৃদ্ধার দেহ উদ্ধারের পর তদন্তে নেমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তাঁরা বলেন, দিনকয়েক ধরে বেশ কয়েকজন ফেরিওয়ালার আনাগোনা লেগেই ছিল বৃদ্ধার বাড়িতে। কারা আসা যাওয়া করতেন, তা জানতে গোয়েন্দারা এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতেই দেখা যায় বেশ কয়েকজনকে। একজনকে ছাতা মাথায় বেরিয়ে যেতেও দেখা যায়। তাকে দেখে সন্দেহ দানা বাঁধে। তবে তার মুখ দেখতে না পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে পরিচয় জানতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হয় তদন্তকারীদের। অন্যান্য ফেরিওয়ালার সঙ্গে কথা বলতে মগরাহাটে যান একদল গোয়েন্দা। সেখানে গিয়ে কথাবার্তা বলেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যে ‘গেট প্যাটার্নে’র মাধ্যমে আততায়ীর হাঁটাচলা, অঙ্গভঙ্গি খতিয়ে দেখে ময়মুরকে চিহ্নিত করা হয়। শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ধৃতের বাড়ি থেকে বৃদ্ধার সোনার গয়নাগাটি এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতকে জেরা করে এই ঘটনা সংক্রান্ত আরও নানা তথ্য পাওয়া যাবে বলেই আশা তদন্তকারীদের।