• Father's day 2025: ছোট্ট সেই ভুল আজও কেমন কষ্ট দিয়ে যায়
    এই সময় | ১৫ জুন ২০২৫
  • রূপক মজুমদার

    ২০০১ সালে স্ত্রীর সঙ্গে যখন বিচ্ছেদ হচ্ছে দেবমাল্য ঘোষের, বয়স তখন ৪১। মেয়ে মাত্র পাঁচ। ইচ্ছে করলেই হয়তো নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবতে পারতেন। কিন্তু ইচ্ছাটাই তো তৈরি হয়নি। একরত্তি মেয়েকে নিয়ে শুরু নতুন এক ভুবন গড়ে তোলার অভিযান।

    আজ দেবমাল্য ৬৪। সে দিনের একরত্তি মেয়ে ঋতু এখন রীতিমতো ব্যস্ত এক কন্যা। এমএসসি, বিএড করে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মগ্ন। পোশাকি নাম দিতিপ্রিয়া হলেও দেবমাল্যর কাছে তিনি ঋতু, আদরের বাবাই।

    বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-রেজিস্ট্রার আগের মতোই অনম্তর্মুখী। বলে ওঠেন, ‘যা করেছি, তা মেয়ের জন্যই। এটা পাঁচজনকে জানানোর নয়। আমিই ওর বাবা-মা-বন্ধু। সেটা ঘটা করে বলতে হবে কেন!’

    তবুও মন ফিরে যায় অতীতে। ছোট্ট ঋতুকে স্কুলে পাঠানোর আগে পোশাক ইস্ত্রি থেকে টিফিন তৈরি করা, ব্যাগে সমস্ত কিছু গুছিয়ে দেওয়ার সঙ্গে জুতো পালিশ। দেবমাল্য হেলায় সামলেছেন সবকিছু। এখনও মেয়ের সামান্য অসুখে উতলা হয়ে ওঠেন। বলে ওঠেন, ‘এখনও ওর শরীর খারাপ হলে রাত জাগি। এটা আমার একান্তই নিজস্ব এক অনুভূতি। মায়ের অভাবটা বুঝতে দিইনি।’

    শুধু সেই এক দিনের ছোট্ট একটা ভুল এখনও বিঁধে রয়েছে কাঁটার মতো। তখন দেবমাল্যরা থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবাস কুঠির আবাসনে। প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে গোলাপবাগের অফিসে যেতেন।

    সকালে স্কুলে মেয়ের। ছুটি বেলা সাড়ে বারোটায়। বাস নামিয়ে দিয়ে যেতো বনবাস কুঠির গেটে। মেয়েকে স্নান করিয়ে, খাইয়ে দিয়ে ফের কর্মস্থলে। উপাচার্যের বিশেষ অনুমতি নিয়েই তিনি অফিস থেকে বেরোতেন।

    এমনই এক দিন কাজের চাপে ভুলে গিয়েছিলেন মেয়ের কথা। বেলা আড়াইটা নাগাদ মনে পড়েছে মেয়ের কথা। উদভ্রান্তের মতো ছুটলেন স্কুলে, খোঁজ নিলেন স্কুল বাসের। অবশেষে মেয়ের খোঁজ মেলে তারই ক্লাসে পড়া এক সহপাঠীর বাড়িতে।

    দেবমাল্য বলছেন, ‘সেই ভুলটা এখনও কষ্ট দেয়। বাবা হয়ে কী ভাবে ভুললাম মেয়ের কথা! অনেককিছুই তো হতে পারত!’ আর যাকে ঘিরে দেবমাল্যের নতুন জগত, সেই দিতিপ্রিয়া বলছে, ‘বাবা আমার সব। আমার পৃথিবী তো ওঁকে ঘিরেই। আমার জন্য প্রত্যেকটি দিন বাবা দিবস।’

  • Link to this news (এই সময়)