• খিদিরপুরে সরকারি খরচায় বাজার, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ জুন ২০২৫
  • খিদিরপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২০০ দোকান। দমকলের ২০টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কিছু জায়গায় পকেট ফায়ারিং রয়েছে। সোমবার পুড়ে যাওয়া বাজার পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী, অরূপ বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল সেন। বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর তিনি জানান, সরকার ব্যবসায়ীদের পাশে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য করা হবে। সরকারি খরচায় বাজারও তৈরি করে দেওয়া হবে।

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া বাজার নতুন করে তৈরি করে দেবে পুরসভা। তবে যত দিন না নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে, তত দিন পাশের একটি জায়গায় দোকানদারেরা বসতে পারবেন। নতুন বাজার তৈরি করতে ব্যবসায়ীদের কোনও টাকা দিতে হবে না। কার কার দোকান জ্বলে গিয়েছে, কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। সেই অনুযায়ী একটি রিপোর্টও তৈরি করা হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পুরো দোকান পুড়ে গেলে ১ লক্ষ টাকা এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার টাকা দেবে রাজ্য।’

    মুখ্যমন্ত্রী জানান, আর্থিক সাহায্যের আগে পুরসভার তরফে সমীক্ষা করা হবে। যত দিন পর্যন্ত না সমীক্ষা শেষ করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, তত দিন ক্ষতিগ্রস্তদের সংসার চালাতে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যেই একজন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার জানতে চান, কতদিনের মধ্যে দোকান করে দেবেন? কবে পাব ক্ষতিপূরণের টাকা? মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘আপাতত আমরা অস্থায়ী দোকান তৈরি করে দেওয়া হবে, সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতিপূরণও। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে সরকারের প্রসিউডির মেনে স্থায়ী দোকান গড়ে তোলা হবে।’

    দমকলকর্মীদের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট কিংবা দাহ্য বস্তু থেকেই আগুন লেগেছে। অবশ্য সিলিন্ডার লিক করে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের আশ্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁর যেখানে দোকান ছিল, তাঁর দোকান সেখানেই গড়ে দেওয়া হবে। একজনও বাইরের কেউ ঢুকবে না। তার আগে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে, কীভাবে আগুন, কার দোকানের কতখানি ক্ষতি হয়েছে।’ এলাকাটি ব্যারিকেড করে রাখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণের চেয়ে তো দামী আর কিছু হতে পারে না। তাই মাঝেমধ্যে সিলিন্ডারগুলোও চেক করে নেবেন। তাতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে।’

    সোমবার বেলার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তিনি বলেন, ‘অন্তত ১২০০-র মতো দোকান পুড়ে গিয়েছে। দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। তবে আগুনে কেউ জখম হননি। ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছে, বা ব্যবসায়ীরা যেমনটা অভিযোগ করছে ইচ্ছাকৃত কেউ আগুন লাগিয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

    রবিবার রাত ১টা নাগাদ খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ মার্কেটে আগুন লেগে যায়। সেখানে রয়েছে তেল এবং মাখনের গুদাম। এর ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ব্যাপক আকার নেয়। স্থানীয়েরাই প্রথমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। একের পর এক দোকান এবং গুদামে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বহু প্রাচীন এই মার্কেটে দামী মশলা থেকে ফল, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১২০০টি দোকান পুড়ে গিয়েছে।

    স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিক সময়ে দমকল আসেনি। আগুন নেবানোর কাজ সঠিক সময়ে শুরু করা গেলে ক্ষয়ক্ষতি আটকানো যেত।সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে যান রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। দমকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা গাড়ি আসতে গেলেও তো কিছু সময় লাগে। ওয়াটগঞ্জ, গার্ডেনরিচ থেকে দমকলের গাড়ি এসেছে। জীবন বিপন্ন করে কাজ করেন আমাদের লোকজন। তা ছাড়া, দোকান করার সময়ে অনেকেই ঠিক মতো নিয়ম মানেন না। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। একটা ঘটনা ঘটেছে, আমরা দেখব।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)