বাবা ট্রাক চালক, মা গৃহবধূ। পদ্মার ভাঙনে তাঁদের বাড়ি বার কয়েক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনটনের সংসারে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাই স্কুলে লেখাপড়া। চরের গ্রাম লালকূপের তামান্না খাতুনের সর্বভারতীয় ‘নিট’-এ সাফল্যে এখন খুশির হাওয়া ডোমকল মহকুমা জুড়ে। গৃহশিক্ষকের সাহায্য মেলেনি তামান্নার। এর মধ্যেও মাধ্যমিকে প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। তারপর পড়াশোনা একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে পড়তে পড়তেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ‘নিট’-এ সাফল্য পেলেন তামান্না। তাঁর এই সাফল্যে খুশি চরের বাসিন্দারা।
শুধু অসচ্ছলতা বা প্রত্যন্ত গ্রামের হাজার প্রতিকূলতা নয়, আরও সমস্যা ছিল। বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও তামান্না হাল ছাড়েননি। গত বছর ‘নিট’এ বসেছিলেন তিনি। কয়েক নম্বরের জন্য অসফল হন। এ বার সেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ৫২৬ নম্বর পেয়ে ২৬,৮৮৬ র্যাঙ্ক করেন তিনি। তামান্নার কথায়, ‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হওয়ার। সেই স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া শুরু করি। গত বছর একটুর জন্য সফল হতে পারিনি। তবে হতাশ হয়ে পড়িনি। এই সাফল্যের পিছনে আমার পরিবার, স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অবদান অনেক। এখন চিকিৎসক হয়ে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই।’’ এমনিতেই বছর বছর ভাঙনে পিছিয়ে পড়েছে চরের গ্রাম। চোরা কারবারও লেগে আছে। ওই এলাকায় এর আগে কখনও এমন সাফল্য কোনও মেয়ে পেয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না কেউ-ই। ওই গ্রামের বাসিন্দা জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় কোনও মেয়ের এমন সাফল্য সম্ভবত এই প্রথম। তামান্নার এমন সাফল্যে খুশি এলাকার মানুষ।’’ সাগরপাড়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট চিকিৎসক ঔরঙ্গজেব বলেন, ‘‘আমিও ওই এলাকা থেকে অনেক লড়াই করে লেখাপড়া করেছি। এমন পিছিয়ে পড়া এলাকা থেকে তামান্নার এমন সাফল্য অর্জন ভীষণ কঠিন ছিল।’’ ডোমকলের মহকুমাশাসক শুভঙ্কর বালা বলেন, ‘‘তামান্নাকে দেখে অন্য পড়ুয়াদেরও শিক্ষা নিতে হবে।’’