ঘড়ির কাঁটায় রাত একটা। রানাঘাট রেল স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে ক্রমশ জমছে ভিড়। কারও হাতে জাতীয় পতাকা। কেউ আবার সঙ্গে এনেছেন ফুলের মালা, উত্তরীয়। জলপাইগুড়ি রোড-শিয়ালদহ উদ্বোধনী হামসফর এক্সপ্রেস রানাঘাটে পৌঁছানোর প্রহর গোনা চলছে। অবশেষে মাইকে রেলের ঘোষণা— ‘০৩১১৬ ডাউন জলপাইগুড়ি রোড-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস অল্প কিছু সময়ের মধ্যে দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে।’ ঘোষণা শুনেই বাঁধ ভাঙল উচ্ছ্বাসের, আবেগের। তেরঙ্গা পতাকা উড়িয়ে, ভারতমাতার জয়ধ্বনি দিয়ে মধ্যরাতে ওই ট্রেনকে কার্যত বরণ করলেন বহু সাধারণ মানুষ। মুহূর্তে সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে রাতের রানাঘাট স্টেশন চেহারা নিল উৎসবের।
নির্ধারিত সময়ের আট মিনিট আগে লাল রঙের ঝাঁ-চকচকে ২১ কামরার নতুন এলএইচবি রেক থামল রানাঘাট প্ল্যাটফর্মে। উৎসুক মানুষের অনুরোধে ইঞ্জিন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে দাঁড়ালেন চালক তাপস সাধুখাঁ-সহ চালক সমীরণ পাল। উত্তরীয়, ফুলের মালা, স্তবকে তাঁদের বরণ করে নেওয়া হয়। তবে প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্যের তুলনায় ট্রেনের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় দুই দফায় ট্রেন থামাতে হয়েছে প্ল্যাটফর্মে। দ্বিতীয় দফায় অভ্যর্থনা জানানো হয় ট্রেনের ম্যানেজার তথা গার্ড আশিসকুমার গোলদারকে। ঘটনাচক্রে তাঁরা তিন জনই নদিয়ার বাসিন্দা। চালক কৃষ্ণনগর, সহচালক মদনপুর ও গার্ডের বাড়ি বগুলায়। তাঁদের হাত ধরে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উত্তরবঙ্গগামী এক্সপ্রেস জেলা ছুঁয়েছে এ দিন রাতে। এই প্রাপ্তিতে শুধুমাত্র রেল কর্মী হিসেবে নন, তাঁরা আনন্দিত জেলাবাসী হিসেবেও।
নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট আগে ট্রেন পৌঁছায় শিয়ালদহের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ইঞ্জিন থেকে নেমে সহকারী চালক বলেন, ‘‘এত দিন জেলার বেশিরভাগ মানুষকে উত্তরবঙ্গের ট্রেন ধরার জন্য নৈহাটি বা শিয়ালদহ আসতে হত। আমি নিজেও আনন্দিত। এই ট্রেন রানাঘাট, কৃষ্ণনগর হয়ে চলাচল করবে।’’
উদ্বোধনী ট্রেনে সফর করতে গাংনাপুর থেকে শেষ লোকাল ট্রেন ধরে রানাঘাটে এসেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে প্রায় ৪০০ টাকা দিয়ে রানাঘাট থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার জন্য এই ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম।’’
আবার, রানাঘাটে ট্রেন থামার অনেক আগে থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন বগুলা থেকে আসা শুভ্রজিৎ দাস, নবীন গোলদার, সঞ্জু বিশ্বাস, কার্তিক রায়ের মতো একঝাঁক তরুণ। শুধু স্টেশন চত্বরে উত্তেজনার মধ্যেই তাঁরা সীমাবদ্ধ ছিলেন না, ট্রেনের যাত্রীদের মিষ্টিমুখ করাতে রানাঘাট থেকে নৈহাটি পর্যন্ত সফর করেন তাঁরা।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন উদ্বোধনী ট্রেন চললেও আগামী ২০ জুন, শুক্রবার শিয়ালদহ থেকে ও ২১ জুন শনিবার জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন থেকে সাপ্তাহিক হামসফর এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল শুরু করবে। তবে প্রথম দিনের উদ্বোধনী ট্রেনে সংরক্ষিত কামরায় যাত্রী সংখ্যা কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। আগামী দিনে এই পথে দৈনিক কোনও উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন চালানো যায় কিনা, তা নিয়েও ভাবনা রয়েছে রেলের।