• ওবিসি তালিকা নিয়ে জনমানসে ভুল বার্তা যাচ্ছে বিরোধীদের জন্য! মন্ত্রিসভার বৈঠকে মমতা বললেন: মানুষকে বোঝান
    আনন্দবাজার | ১৬ জুন ২০২৫
  • বিরোধীদের বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য অন্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র তালিকা নিয়ে জনমানসে ভুল বার্তা যাচ্ছে। সোমবার বিধানসভায় রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওবিসি তালিকার বিষয়টি সাধারণ মানুষকে সঠিক ভাবে বোঝানোর জন্য মন্ত্রীদের বার্তা দিলেন মমতা।

    মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি জানান, আদালতের নির্দেশে ওবিসি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা তৈরির দায়িত্বে ছিল অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন। এ ক্ষেত্রে যে সরকারের ভূমিকা সীমিত ছিল, তা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে বিধানসভায় বক্তৃতা করেন মমতা। সেখানেও ওবিসি তালিকা নিয়ে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ১৪০টি জনগোষ্ঠীর যে তালিকা তৈরি হয়েছে, সেখানে অমুসলিম জনগোষ্ঠীও রয়েছে। বিধানসভায় মমতা জানান, ওই তালিকার মধ্যে ৮০টি সংখ্যালঘু (মুসলিম) জনগোষ্ঠী এবং বাকি ৬০টি অমুসলিম জনগোষ্ঠী।

    বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, নতুন তালিকা নিয়ে মুসলিমদের একাংশের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। কারণ, সমীক্ষার সময়ে যাঁরা ‘ওবিসি-এ’ তালিকাভুক্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকে ‘ওবিসি-বি’ তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছেন। আবার অনেকে ‘ওবিসি-বি’ তালিকা থেকে ‘ওবিসি-এ’ তালিকায় চলে এসেছেন। এই নিয়ে কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বলেও জানান মমতা।

    মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানান, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভাতেই ওবিসি তালিকা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ মেনে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই তালিকা তৈরি করেছেন। ‘ওবিসি-এ’ এবং ‘ওবিসি-বি’ তালিকা ঘিরে যে কারও কারও মনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সেটির প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন সিদ্দিকুল্লা। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য হল, আর্থসামাজিক ভাবে যাঁরা পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁদের জন্য ‘ওবিসি-এ’। যদি কারও ‘ওবিসি-বি’ তালিকায় নাম উঠে থাকে, পরে তিনি ‘ওবিসি-এ’ তালিকায় সুযোগ পাবেন।” সিদ্দিকুল্লা আরও বলেন, “এ নিয়ে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর প্রশ্ন ওঠে না। ওবিসি কমিশন সাংবাদিক বৈঠক করে তা বলে দিয়েছে। এটি নিয়ে সরকারের কিছু বলার নেই। ওবিসি কমিশন খোলা আছে, তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সাংবাদিক বৈঠক করেছে। কারও বিস্তারিত জানার থাকলে সেখান থেকে জানতে পারবেন।” রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী জানান, ওবিসি জনগোষ্ঠীর মানুষদের পুরো বিষয়টি বোঝানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    সম্প্রতি ওবিসির তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। মোট ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয়েছে সেই তালিকায়। আরও দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে সমীক্ষা চলছে বলে জানানো হয়েছে। বস্তুত, ২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

    হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। রাজ্য ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। সেখানে রাজ্যের মামলাটি এখনও বিচারাধীন। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে কারও সংরক্ষণ পাওয়া উচিত নয়।

    অন্য দিকে, হাই কোর্টের নির্দেশের পর জেলাশাসকদের নেতৃত্বে রাজ্যের সব ক’টি জেলায় সমীক্ষা হয়। সমীক্ষার রিপোর্ট জমা পড়ে অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশনে। রিপোর্টের ভিত্তিতে গত এক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে সল্টলেকের দফতরে শুনানি হয়। তার পর ওবিসি সংরক্ষণের সংশোধিত তালিকার খসড়া মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা দেওয়া হয়। গত ২ জুন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের সংশোধিত (আপডেটেড) তালিকায় সিলমোহর দেওয়া হয়।

    সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের জন্য দু’টি নতুন উপসচিব পদ সৃষ্টির ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি রথযাত্রা নিয়েও মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় থেকে উৎসব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ২৭ জুন-৫ জুলাই রাজ‍্য জুড়ে রথ‍যাত্রা পালিত হবে। সেই সময় যাতে এলাকার পরিস্থিতি ও পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে, সে দিকে নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রিসভার বৈঠকে। রথের দিন মুখ্যমন্ত্রীর দিঘায় যাওয়ার কথা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও দিঘায় যাবেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং সুজিত বসু ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)