যখন বয়স মাত্র তিন বছর তখনই বিরল স্নায়ুরোগ এসএমএ বা স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (টাইপ-২)-তে আক্রান্ত হন স্বর্ণাভা বেরা। ফলে শৈশব থেকেই তাঁর সঙ্গী হুইল চেয়ার। খাওয়া, ঘুমানো, বসা থেকে পড়াশোনা সবকিছুর জন্যই বাবা-মা'র উপর নির্ভরশীল স্বর্ণাভা। কিন্তু তাতেও হার মানেননি পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানার প্রত্যন্ত তাতারপুর গ্রামের এই মেয়ে। ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। এ বার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে তাঁর।
কারণ, নিট (NEET- UG) পরীক্ষায় র্যাঙ্ক করেছেন স্বর্ণাভা। তাঁর ইচ্ছা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকেই পড়াশোনা করা। তাঁর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। স্বর্ণাভার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও। তাতেও দুশ্চিন্তা কাটছে না স্বর্ণাভার বাবা সর্বরঞ্জন বেরার। কী ভাবে মেয়ে পড়া চালিয়ে যাবে তা নিয়েই চিন্তায় তিনি।
ছোট থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যুঝতে হয়েছে স্বর্ণাভাকে। বিরল স্নায়ুরোগের সঙ্গে সংগ্রাম করেই আনন্দপুর থানার সাহসপুর ঘোষাল হাইস্কুল থেকে ২০২৩ সালে ৬৫৭ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন স্বর্ণাভা। তখন থেকেই মনে মনে 'ডাক্তার' হওয়ার স্বপ্ন বোনা শুরু। চলতি বছরই উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৯৫ শতাংশ নম্বর (৪৭৪) পেয়েছেন স্বর্ণাভা। আর শনিবারই প্রকাশিত হয়েছে নিট পরীক্ষার ফল। স্বর্ণাভার অল ওভার র্যাঙ্কিং ১৪৭১১৩। স্বর্ণাভা নিজের ক্যাটাগরিতে ( Persons with Disabilities) ৮০৭ র্যাঙ্ক করেছেন।
স্বাস্থ্য দপ্তর এবং প্রশাসনের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, এই ক্যাটাগরিতে সরকারি কলেজে প্রায় ৩ হাজার আসন থাকায়, অনায়াসেই ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাবেন স্বর্ণাভা।
সোমবারই স্বর্ণাভার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানিয়ে এসেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি। তুলে দেওয়া হয়েছে কিছু আর্থিক সাহায্যও। রবিবার ফোন করে স্বর্ণাভাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরিও। ইতিমধ্যেই, স্বর্ণাভার পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। এতকিছু সত্ত্বেও অবশ্য দুশ্চিন্তা কমছেনা স্বর্ণাভার বাবার
এই সময় অনলাইন-কে সর্বরঞ্জন বেরা বলেন, ‘মেয়ে চাইছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে। আমরাও সেটাই চাই। তবে এখনও একশো শতাংশ নিশ্চিত নই, এই কলেজই ও সুযোগ পাবে কী না তা নিয়ে। কোনও কারণে যদি না হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো স্বর্ণাভার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।’ এই সঙ্গে তিনি জানান, যদি মেয়ে পড়ার সুযোগ পান তাহলে তাঁকে কথা বলতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কী ভাবে মেয়ে এসে ক্লাস করবে তা নিয়েও চিন্তা কাটছে না তাঁর।
মানস ভূঁইয়া জানিয়েছেন, স্বর্ণাভার চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কারণ তাঁরা পাশেই থাকবেন।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘আশা করছি, ক্যাটাগরিতে স্বর্ণাভা যে র্যাঙ্ক করেছে, তাতে তাঁর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। সেক্ষেত্রে স্বর্ণাভাই হবে জেলা তথা রাজ্যের প্রথম SMA আক্রান্ত ডাক্তারি পড়ুয়া।’
তথ্যঃ মণিরাজ ঘোষ