• এ যেন ‘ছিটমহল’, শিলিগুড়ির ভূমিতে জলপাইগুড়ির অংশ
    বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: এ যেন ছিটমহলের সমস্যা! কোথাও দার্জিলিং জেলার জমিতে জলপাইগুড়ির অংশ। আবার কোথাও দার্জিলিং জেলার মধ্যে জলপাইগুড়ির মৌজা। কোথাও আবার জমির মালিকানা স্পষ্ট নয়। শুধু তাই নয়, জমিগুলির চরিত্রও ভিন্ন। ম্যাপে সেগুলি নদীবাঁধ ও চর হিসেবে উল্লেখিত। এমন জমিজটে জেরবার শিলিগুড়ি। যার জন্য ঝুলছে পাট্টা প্রদান কর্মসূচি। 

    দীর্ঘ তিনদশক ধরে জমিগুলিতে কয়েকশো বাসিন্দা বসবাস করলেও বসতভিটার পাট্টা পাননি। এবার সেই জট কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। মেয়র গৌতম দেব সোমবার এ ব্যাপারে আর্বান ল্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। মেয়র বলেন, জমি সংক্রান্ত ওই সমস্যাগুলি নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে। জমিগুলির শ্রেণি পরিবর্তন করার নির্দেশ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের দেওয়া হয়েছে। 

    জমিজটে জেরবার এলাকাগুলির মধ্যে শহরের বিদ্যাচক্র কলোনি একটি। সূর্য সেন পার্কের পিছনে মহানন্দা নদীর কাছে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে এলাকাটি। পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যাচক্র কলোনির ওই অংশে বাড়ির সংখ্যা ৩৪টি। প্রায় তিনদশক ধরে তাঁদের বসবাস। তাঁরা জলপাইগুড়ি জেলার ভোটার হলেও সংশ্লিষ্ট জমি দার্জিলিং জেলার। আর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের মানচিত্রে সংশ্লিষ্ট জমির চরিত্র বা শ্রেণি নদীবাঁধ। এরজেরেই বাসিন্দারা জমির পাট্টা পাচ্ছেন না। 

    এমন অদ্ভুত সমস্যার জেরবার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘা যতীন কলোনির ২০০টির বেশি এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাউথ বাঘা যতীন কলোনির ১০০টিরও বেশি পরিবার। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলি দার্জিলিং জেলার অধীনে। কিন্তু ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের রেকর্ডে দু’টি জমিই জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম মৌজার অন্তর্গত। জমিগুলির চরিত্র নদীর চর। স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহলের মতো তিনটি এলাকার বাসিন্দাদের দশা। 

    পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের পাট্টা প্রদান করতে যৌথ সার্ভে হয়েছে। নিয়ম অনুসারে এখন জমিগুলির চরিত্র বদল করে বাস্তু করতে হবে। এরপর দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের পাট্টা প্রদান করা হবে। মহানন্দা নদী বিভিন্ন সময় গতিপথ পরিবর্তন করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

    মেয়র বলেন, বর্তমানে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলি থেকে নদী অনেক দূরে। এলাকাগুলিতে বাঁধও নেই। সেচদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর নির্দেশ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরেকে দিয়েছি। 

    এর বাইরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘা যতীন কলোনি উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের অধীনে। এই কলোনি সংলগ্ন এলাকায় ৭৩টি পরিবার রয়েছে। তারাও জমির অধিকার পায়নি। সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট জমি উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে সেই জমি তাদের নয়। এখন ‘নিজগৃহ, নিজভূমি’ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের পাট্টা প্রদান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ভূমিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেছেন মেয়র।
  • Link to this news (বর্তমান)