ড্রোন উড়িয়ে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে চলছে তল্লাশি, এটিএম কাণ্ডে এখনও অধরা দুই দুষ্কৃতী
বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, ময়নাগুড়ি: রাত ২টো নাগাদ জলপাইগুড়ি জেলা পুলিস থেকে শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেটের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানানো হয় ময়নাগুড়ির এটিএম লুটের ঘটনা। তারপর থেকেই আর চোখের পাতা এক করতে পারেনি গজলডোবা ফাঁড়ি, ভোরের আলো থানা থেকে শুরু করে ভক্তিনগর থানার পুলিস কর্মীরা। ‘অপারেশন জঙ্গল’-এ নেমে ইতিমধ্যে তিনজন দুষ্কৃতীকে ১৫ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা সহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। জলপাইগুড়ি জেলার পুলিস কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বনকর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে অপারেশন সম্পন্ন করেছে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিস। তবে এখনও অধরা দুই দুষ্কৃতী। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে ড্রোন উড়িয়ে চলছে তল্লাশি।
ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। বাকি দুই দুষ্কৃতী জঙ্গলে রয়েছে কি না, তা নিয়ে পুলিসের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের হানা বা বন্যজন্তুর আক্রমণের ফলে দুই দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ। অন্যকোনও পথে দুষ্কৃতীরা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে সিসি ক্যামেরায় রাখা হচ্ছে নজর। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, আমরা লাগাতার তল্লাশি চালাচ্ছি। সব বিষয়কে মাথায় রেখেই তদন্ত এগচ্ছে।
এদিকে, সোমবার ময়নাগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে জলপাইগুড়ির পুলিস সুপার খণ্ডবহালে উমেশ গণপত বলেন, এটিএম লুট কাণ্ডে ধৃতদের মধ্যে আসলুপ খান দিল্লি পুলিসের সাসপেন্ড হওয়া কর্মী। ২০১৬ সালে অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করে দিল্লি পুলিস। এটিএম কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত আসলুপ ছাড়া শামসের খান ও ইরফান খান ধরা পড়েছে। আরও দু’জন ওই দলে ছিল। তাদের খোঁজ চলছে।
দুষ্কৃতী দলটি গত ১৩ জুন ময়নাগুড়িতে ঢোকে। ওই দিন শহর ও গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। বোলবাড়ি এলাকাটি ফাঁকা দেখতে পায় এবং দোকানপাট বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা দু’টি এটিএম ভাঙচুর করে প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা নিয়ে বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের দিকে পালিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত যে তিনজন ধরা পড়েছে তাদের হেফাজত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার না হলেও বাকিদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারী পুলিস অফিসাররা। পুলিস সুপার জানান, একটি ভিডিও দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে পুলিসকে সহযোগিতা করেছে। বোলবাড়ি এলাকায় এটিএম লুটের ঘটনায় একটি সন্দেহজনক গাড়ি দেখতে পান এক ব্যক্তি। তিনি ওই সময় ওদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ব্যাঙ্কের কর্মী। এই ঘটনা দেখতে পেয়ে তিনি ছোট ভিডিও করেছিলেন। পরবর্তীতে রাস্তায় থাকা পুলিসকে খবর দেন। কন্ট্রোল রুম থেকে এলার্ট জারি করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন থানা দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে।
পুলিস জানিয়েছে, অভিযুক্তরা পালানোর জন্য প্রথমে জাতীয় সড়ককে বেছে নেয়। কিন্তু সেখানে পুলিস দেখে রুট বদল করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে চলে যায় গজলডোবায়। পুলিস সুপার বলেন, বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে দু’টি ব্যাগ মিলেছে। দিল্লি পুলিসের একটি ক্যাপ উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের হেফাজত থেকে গ্যাস কাটার পাওয়া গিয়েছে। ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন।-নিজস্ব চিত্র