বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক তছরুপ! প্রাক্তন উপাচার্যকে তলব সিআইডির
বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধ, বর্ধমান: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দু’কোটি টাকা তছরুপের ঘটনায় এবার প্রাক্তন উপাচার্যকে তলব করল সিআইডি। আগামী কাল, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহাকে সিআইডি অফিসে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। সিআইডি চিঠিতে জানিয়েছে, বর্ধমান থানার ২১২/২০২৪(তারিখ ২২.২.২০২৪) মামলায় এই চিঠি করা হচ্ছে। ওই কেসের সম্পর্কে জানার জন্য তাঁকে ডাকা হচ্ছে। আসল ঘটনা কী হয়েছিল সেটা তদন্তের প্রয়োজনে জানতে চাওয়া হবে। ওইদিন সিআইডির বর্ধমান অফিসে হাজির থাকার জন্য বলা হয়েছে। যদিও এব্যাপারে নিমাইবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ওই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি অরিন্দম মল্লিক বলেন, এটা হওয়ারই ছিল। উনি যখন ভিসি ছিলেন তখন পুরো বিষয়টি তাঁর কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম। শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্যও বলা হয়েছিল। সেসব কিছুই করা হয়নি। সেটা করা উচিত।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ঘটনার তদন্তে সিআইডি অনেককেই জেরা করেছে। কাউকে তলব করা মানে তিনি দোষী নন। প্রাক্তন ভিসির কাছ থেকে সিআইডি পুরো বিষয়টি জানতে চাইবে। ঘটনার সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তাই এর মধ্যে অন্য কিছু খুঁজতে যাওয়া এখনই ঠিক হবে না।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আচমকাই জানতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় এক কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। বর্ধমানের বড়বাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ওই টাকা তোলা হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে কীভাবে ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা উধাও হয়ে গেল, তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। আর্থিক তছরুপের ঘটনায় ইডিও তদন্ত শুরু করেছে।কীভাবে ঘটনা সামনে এল? সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যাঙ্কে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা তোলার জন্য আবেদন জমা পড়ে। এক ঠিকাদার সংস্থার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না করে তা কেন ঠিকাদার সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করতে বলা হয়, তা নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থেকে বিষয়টি জানতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চমকে ওঠে। তারা পুরো বিষয়টি জানিয়ে বর্ধমান থানায় মামলা করে। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, এর আগেই এক কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯হাজার ৮৭৬টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বর্ধমান থানায় আরও একটি অভিযোগ করেন। এরপরই তদন্তে নেমে আধিকারিকরা রাঘব বোয়ালদের সন্ধান পান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হওয়ায় কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করে। ততদিনে ভিসি বদলি হয়ে গিয়েছেন। অস্থায়ী ভিসি দায়িত্বে থাকায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সামনে আসেনি। দীর্ঘদিন ইসির বৈঠক হয়নি। কয়েক মাস আগে ইসির বৈঠকে তদন্ত রিপোর্ট সামনে আনা হয়। তাতেও রাঘব বোয়ালদের যুক্ত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি অবশ্য এখন অবসর নিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীরাও চাইছেন এই ঘটনার হেস্তনেস্ত হোক। যে বা যারা এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।