• জল ছেড়ে গেটের পরীক্ষা ডিভিসির, ফুঁসছে দামোদর
    বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: সূর্যের প্রখর তেজে নাভিশ্বাস উঠছে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার। সেভাবে বৃষ্টির দেখা নেই। অন্যান্য দিনের মতোই সোমবার ভোরে অস্থায়ী সেতু পেরিয়ে শিল্পাঞ্চলে সব্জি বিক্রি করতে এসেছিলেন হাজারেরও বেশি চাষি। তাঁদের পাশাপাশি বহু মানুষও কাজের সন্ধানে নদী পেরিয়েছিলেন। ফেরার পথে মাথায় হাত! দামোদরের জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে পারাপারের সবক’টি অস্থায়ী সেতু। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ অংশের। কিন্তু কেন এমন অঘটন? জানা গিয়েছে, বর্ষার আগে মাইথন ও পাঞ্চেতের গেটগুলির অপারেশন সঠিক রয়েছে কিনা, দেখতে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে। সেই জলেই ভেসে গিয়েছে সেতুগুলি। তাতেই চরম দুর্ভোগ। অন্যদিকে, সেচদপ্তর দুর্গাপুর ব্যারাজ সংস্কার সময় মতো করে। ফলে, ওই  অঞ্চলে সমস্যা হয়নি। জানা গিয়েছে, মা‌ইথন ও পাঞ্চেতে অতিরিক্ত জল ছাড়ায় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ১৫ হাজার ৫০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। আটটি গেট খোলা হয়েছে। ব্রিজ সংস্কারের জন্য নদীর তলদেশে বানানো অস্থায়ী সেতুটি জলের তলায় চলে গিয়েছে। যদিও ব্যারাজে যাতায়াত স্বাভাবিক। 

    ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষার আগে প্রতি বারই মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারের গেটগুলির অপারেশন ঝালিয়ে নেওয়া হয়। পুরো বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন শীর্ষ আধিকারিকরা। এছাড়া দীর্ঘদিন জল না ছাড়ার জেরে মাইথন ও পাঞ্চেতের জলস্তরও বেড়েছিল। তাই, রবিবার থেকে জল ছাড়া শুরু করে ডিভিসি। সেদিন মাইথন থেকে ৬ হাজার কিউসেক হারে ও পাঞ্চেত থেকে ৯ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। সোমবার ভোর ছ’টা থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হয়। মাইথন থেকে আট আজার ৫০০ ও পঞ্চায়েত থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের হীরাপুর থানা এলাকা ও বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানা এলাকার মধ্যে তিনটি অস্থায়ী সেতু রয়েছে। যা দিয়ে বাঁকুড়ার পাশাপাশি ওই এলাকার সংলগ্ন পুরুলিয়ার মানুষও আসানসোল শিল্পাঞ্চলে আসেন।  সকালে ব্রিজগুলি ঠিক ছিল। সাইকেল করেই বহু মানুষ বার্নপুর, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে এসেছিলেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ন’টা  থেকে দশটার মধ্যে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সেতুগুলি ভেঙে যায়। শালতোড়ার বাসিন্দা রঞ্জিত বাউরি বলেন, ‘সকাল ছ’টার সময়ে ব্রিজের উপর সাইকেল চালিয়ে এসেছিলাম। এখন বাড়ি ফেরার পথে দেখছি সেতু ভেঙে গিয়েছে। কী করে ফিরব, বুঝতে পারছি না! সাইকেল নিয়ে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে বাড়ি ফিরতে হবে।’ বার্নপুরের বাসিন্দা সন্দীপ মুনি বলেন, ‘আমি শালতোড়ায় আত্মীয়র বাড়ি যাচ্ছিলাম। নদীর কাছে এসে দেখলাম সেতু ভেঙে গিয়েছে। আমাদের যাঁদের বাইক, গাড়ি আছে তারা না হলে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে মেশিয়া বা দিসেরগড় ব্রিজ হয়ে নদী পার করতে পারব। কিন্তু যাঁরা হেঁটে বা সাইকেলে যাতায়াত করেন, তাঁদের খুব সমস্যায় পড়েছেন।

    দামোদর বিহারীনাথ সেতুবন্ধন কমিটির সম্পাদক চন্দন মিশ্র বলেন, ‘অন্য সময়ে বর্ষা কালে অস্থায়ী সেতু ভেসে যায়। এবার তো আগের থেকেই অঘটন ঘটে গেল। আমরা প্রশাসনের সর্বস্তরে অনুরোধ করেছি, একটি পাকা সেতু করা হোক।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)