• নোটিস দিয়েই দায় সারে আসানসোল পুরসভা, দেড় বছরেও ভাঙা হয়নি বেআইনি নির্মাণ
    বর্তমান | ১৭ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ২০২৩সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস নাগাদ  আসানসোল শিল্পাঞ্চলজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। ঘুঘুর বাসায় ঢিল মেরেছিল আসানসোল পুরসভা। জামুড়িয়ার বেসরকারি কারখানাগুলির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেবিষয়ে তদন্তে নেমে পুরসভার চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড় হয়। পুরসভা থেকে কোনও প্ল্যান অনুমোদন না করি঩য়েই এক একটি কারখানা ১০-১২হাজার বর্গফুট নির্মাণ করেছে। এরকম ১১টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়। কড়া আইনি নোটিস পাঠায় পুরসভা। অবৈধ নির্মাণ ভাঙার পাশাপাশি প্রতিটি কারখানাকে মোটা টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার সম্মিলিত অঙ্ক ৫০০কোটি ছাপিয়ে গিয়েছিল। পুরসভা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই টাকায় মানুষের উন্নয়নের কাজ হবে। পরিষেবা আরও উন্নত হবে। আশা দেখেছিলেন শহরবাসীও। কিন্তু, অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে দেড় বছর। দামোদর দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেলেও ওই বিষয়ে আর কোনও পদক্ষেপ হয়নি। কারখানার অবৈধ নির্মাণগুলি বহাল তবিয়তেই রয়েছে। জরিমানার টাকাও আদায় হয়নি। পুরসভার এই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের মনে। বিরোধীরাও সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের সঙ্গে ‘আন্ডার দ্য টেবিল’ রফা হয়ে যাওয়ার জন্যই পুরসভা নীরব। তবে, অভিযোগ মানেননি আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমাদের বোর্ডই প্রথম এনিয়ে পদক্ষেপ করেছে। আইনি নোটিস দেওয়ার পর মালিকপক্ষ কয়েক দফায় আমাদের কাছে এসে সময় চেয়েছে। যেহেতু কারখানার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগসূত্র রয়েছে, তাই অনেক ক্ষেত্রে আমাদেরও মানবিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কিন্তু, অনেক সময় দেওয়া হয়েছে, আর নয়। সামনের সপ্তাহেই পুরসভার কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জামুড়িয়ার সবচেয়ে বড় নদী ছিল সিঙ্গারণ। দামোদরের উপনদী সিঙ্গারণ আজ লুপ্তপ্রায়। সৌজন্যে অসাধু বেসরকারি কারখানা কর্তৃপক্ষগুলির একাংশ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর পাশাপাশি বনভূমি, ইসিএলের জমি সবই দখল করেছে তারা। এ নিয়ে বাম থেকে শুরু করে বর্তমান সরকার, সকলেই নীরব থেকেছে। শেষে ভিমরুলের চাকে ঢিলটা মেরেছিল আসানসোল পুরসভা। জমি দখল, অবৈধ নির্মাণ নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করে। শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। অতি প্রভাবশালী মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কি এবার পদক্ষেপ নেওয়া হবে? আশা দেখেছিলেন অনেকেই। যদিও দেড় বছর পর তাঁরা নিরাশ। সেই সময়েই আসানসোল পুরসভা রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি কারখানাও পরিমাপ করে। সেখানে দেখা যায়, দু’লক্ষ ৬১হাজার বর্গফুট অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। সেখানে পুরসভা থেকে কোনও প্ল্যান অনুমোদন করানো হয়নি। ২০২৩ সালের ৭ডিসেম্বর পুরসভা নোটিস জারি করে, ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিতে হবে। তাও কিছু হয়নি। বিজেপি জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি সাংবাদিক সম্মেলন করে এর তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, পুরসভা পদক্ষেপ না দিলে বিজেপি এবার আইনি পথে হাঁটবে।
  • Link to this news (বর্তমান)